‘ঐ নতুনের কেতন উড়ে—’
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০:৩৮ অপরাহ্ন
নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে পার্টির মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, এই মঞ্চ থেকে আমরা শপথ নিতে চাই, এই ছোট জীবনে এতো বড়ো দায়িত্বের আমানতকে যেনো আমরা খেয়ানত না করি। তিনি বলেন, আমরা যদি বাংলাদেশকে সুসংগঠিত করতে চাই তাহলে আমাদের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে আগামীর বাংলাদেশ হবে ঐক্যের বাংলাদেশ। হাসিনা এদেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংগঠিত করতে হবে। আমরা দেশ এবং জাতিকে সবার ওপরে রেখে যেনো আমরা নতুন ও সাম্যের বাংলাদেশ গঠন করতে পারি।
এছাড়া দলটির সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে গণতন্ত্রের বাংলাদেশ। তরুণরা নেতৃত্ব দিয়ে চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে। আগামীর বাংলাদেশে আর আগের মতো রাতে ভোট হবে না। নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সব দল মিলে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। গত শুক্রবার রাজধানীতে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তারা উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।
বলা বাহুল্য, জাতীয় নাগরিক পার্টি নামক যে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে, সেটা জুলাই আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থানেরই লিগ্যাসী বা উত্তরাধিকারী। কারণ এই দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতাই আগস্ট ও জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, নেতৃত্ব দান করেন। তাই এই নতুন দলের প্রতি জনগণের আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই বেশী। শুধু আগ্রহ নয়, অনেকে অনেক প্রত্যাশা করেন তরুণ যুবাদের নেতৃত্বাধীন এই দলটির কাছে।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের নেতৃবৃন্দ কিছু চমৎকার ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। সারজিস আলম বলেছেন, এই ছোট জীবনে এতো বড়ো দায়িত্বের আমানতকে যেনো আমরা খেয়ানত না করি। কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী জনগণের যে সমর্থন দিয়ে রাজনীতি বা কাজ করেন, তা নিঃসন্দেহে জনগণের দেয়া একটি আমানত। এই আমানতের যাতে খেয়ানত না হয় সেদিকে আলোকপাত করেছেন জুলাই বিপ্লবের তরুণ নেতা সারজিস আলম। বিগত কয়েক যুগের রাজনৈতিক অঙ্গনের দিকে তাকালে এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে কেউ বলতে পারবেন না প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকাংশ নেতা তাদের দায়িত্ব কিংবা জনগণের সমর্থন বা ম্যান্ডেটকে কখনো তাদের দেয়া আমানত হিসেবে বিবেচনা করেছেন। বরং নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের ভোল পাল্টে যেতে দেখা গেছে।
দেখা গেছে, স্বীয় স্বার্থসিদ্ধি ও আখের গোছানোর আয়োজন করতে। কিন্তু সারজিস আলম প্রথম পর্যায়ে দলীয়ভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরই তার এই দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা ব্যক্ত করতে দেখা গেলো। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। যদি এই নতুন দলটি জনগণের আশা আকাঙ্খা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে হিতৈষী রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তবে বাংলাদেশের ঘূণে ধরা প্রচলিত রাজনীতির ধারা বদলে যাবে। এদেশের রাজনীতিতে সূচনা হবে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় ও ইতিহাসের। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের বৃহৎ দেশগুলোর প্রতি দালালসুলভ মনোবৃত্তি, স্বার্থপরতা ও অপরিমিত লোভ-লালসায় বীতশ্রদ্ধ সাধারণ মানুষ সংগত কারণেই স্বাগত জানাবে এই নতুন রাজনৈতিক দলটিকে, তাদের নেতৃবৃন্দকে।