ধূমপান নিয়ে তোলপাড়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০:৩৩ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ঢাকার লালমাটিয়া এলাকায় চায়ের দোকানে দুই তরুণীর ধূমপান করা নিয়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ফেইসবুকে রীতিমতো তোলপাড় হয়েছে, যার জের এখনো অব্যাহত। দেশে পাবলিক প্লেসে অর্থাৎ প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ ও তা দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এই নিষিদ্ধ কাজটি অবলীলায় প্রতিনিয়ত করে চলেছেন অগণিত ধূমপায়ী। সারাদেশেই চলছে এই বেআইনী কাজটি। সম্প্রতি জাতীয় মিডিয়ায় মন্তব্য করলে জনৈক পাঠক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখেছেন। ধূমপানসহ তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক নিয়ে। তিনি লিখেছেন, ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যটিই একমাত্র খাবার, যেটির গায়ে লেখা থাকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথচ মানুষ সেটাই গ্রহণ করে। সিগারেট, জর্দা, গুলসহ নানা ধরনের তামাকজাত দ্রব্য মানুষকে ফুসফুস ও মুখে ক্যান্সার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকসহ নানা রোগে আক্রান্ত করছে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ বিড়ি সিগারেট জর্দা গুল সাদাপাতাসহ নানা ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত। আইন থাকার পরও সরকার ও আইন শৃংখলা বাহিনীর অনেকে তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ করতে চাইলে তা গোঁড়া থেকে নির্মূল করতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রথমেই তামাক চাষকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করে তামাক চাষ, উৎপাদন ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে চা, ফলমূল, চাষাবাদের জন্য চাষীদের উদ্বুদ্ধ ও সাহায্য করতে হবে।
তিনি আরো লিখেছেন, সব ধরনের সিগারেট, জর্দা ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের কোম্পানীগুলো বন্ধ করতে হবে। সব ধরনের দোকান থেকে সিগারেট কেনা-বেচা নিষিদ্ধ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ঘোষণা করতে হবে। সরকারী চাকুরীজীবী কেউ ধূমপান, জর্দা ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত থাকলে তাকে প্রথমে সতর্ক ও শেষ পর্যন্ত চাকরী থেকে বহিষ্কার করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বা অন্য কেউ ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করলে তাকে বহিষ্কার ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সরকারের উচিত সিগারেট ও তামাকপণ্য থেকে ভ্যাট ট্যাক্স পাওয়ার কথা না ভেবে জনগণের ক্ষতিটি কথাটি চিন্তা করা।
ভূটানের মতো দেশ এক্ষেত্রে সফল হলে বাংলাদেশ পারবে না কেনো। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। উপরোক্ত বক্তব্য অত্যন্ত সারগর্ভ ও জনস্বাস্থ্যের নিরিখে অনুসরণযোগ্য। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিশে^র বিভিন্ন উন্নত এমনকি উন্নয়নশীল দেশে যখন ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে, তখন বাংলাদেশে এগুলোর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রচারণার ফলে সমাজের কিছু মানুষ সচেতন হলেও অশিক্ষিত ও অসচেতন শ্রেণীর মানুষের মাঝে বৃদ্ধি পাচ্ছে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। বিশেষভাবে তরুণদের মাঝে ইদানিং ধূমপান বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক। সাম্প্রতিককালে আরেকটি নতুন উপসর্গ লক্ষ্য করা যাচ্ছে সমাজে। নারীদের অনেকে বিশেষভাবে তরুণীরা ক্রমবর্ধমান হারে আকৃষ্ট হচ্ছে ধূমপানে। শুরুতে যে অপ্রীতিকর ঘটনার কথা বলা হয়েছে, সেটাও তরুণীদের প্রকাশ্যে ধূমপানকে কেন্দ্র করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়গুলোর বিপুল সংখ্যক তরুণী ধূমপানে আসক্ত। অনেকে নগরীর কুমারপাড়া নয়াসড়কসহ বিভিন্ন চাইনিজ হোটেল রেস্তোরাঁকে বেছে ধূমপানের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে। বয়স্ক লোকজন সেসব স্থানে কম যান, তাই এই সুযোগে একশ্রেণীর তরুণ তরুণী মেতে ওঠে ধূমপানে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। সামাজিক রীতিনীতির বিষয়টি ছাড়াও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিবেচনায় এ ধরনের চর্চা বা অনুশীলন বন্ধ হওয়া উচিত। পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা উচিত সরকারের তথা আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর, এমন অভিমত সচেতন মহলের।