রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শক্তিশালী হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৫, ৮:২৪:৩৩ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘বাংলাদেশে সমরাস্ত্রের ভান্ডার নিয়ে আসছে তুরস্ক’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্প্রতি তুরস্ক সফর করেন। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, তুরস্কের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে যৌথ সহযোগিতার পথ খুঁজে বের করা এবং সামরিক যান তৈরীর একটি কারখানা স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা। এই সফরের অংশ হিসেবে প্রতিনিধি দলটি তুরস্কের শীর্ষ প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান মেকানিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (এমকেই) পরিদর্শন করেন। বিডা চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটির তৈরী অস্ত্র, গোলাবারুদ, সামরিক যানবাহন ও বিভিন্ন আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ঘুরে দেখেন। সফরে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলাদেশে নতুন গোলাবারুদ ও সমরযান তৈরীর কারখানা স্থাপন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং যৌথ শিল্প সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। বিডা চেয়ারম্যান জানান, আমরা তুর্কি বিশেষজ্ঞদের টেকনিক্যাল এক্সপার্টিজ গ্রহণ করে বাংলাদেশে নিজস্ব সামরিক কারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রয়োজনীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে, ফলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, হালকা অস্ত্র, গুলি, গোলা ইত্যাদি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেশেই উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে এবং তার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব। আশিক চৌধুরী বলেন, আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে একটি বিশেষায়িত মিলিটারি ইকোনমিক জোন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা নয়, বরং আঞ্চলিকভাবে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির পথও খুলে দিতে পারে।
বলা বাহুল্য, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ও অনুপ্রেরণাদায়ী উপরোক্ত সংবাদ। বিগত সময়ে বিশেষভাবে গত দেড়যুগ ধরে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিলো সবচেয়ে অবহেলিত। প্রতিবেশী দেশগুলো যখন মিসাইলসহ নিত্য নতুন সমরাস্ত্র তৈরী করছে, বিদেশ থেকে অত্যাধুনিক জঙ্গী বিমান ক্রয় করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত ও শক্তিশালী করছে, তখন বাংলাদেশ ছিলো এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। এর ফলে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী এই উপমহাদেশে একটি পশ্চাতপদ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে হাসিনা সরকারের ভয়ানক দুরভিসন্ধী ছিলো। ভারত চায় না বাংলাদেশে কোন শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গড়ে ওঠুক। আর হাসিনা ভারতের এই ইচ্ছাপূরণে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে সবধরনের সহায়তা বরাদ্দ থেকে দূরে রাখে। প্রভু রাষ্ট্র ভারতের নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকেই গতানুগতিক যা কিছু সামরিক সরঞ্জাম কিনতো সে। সেগুলো যেমন মান্ধাতা আমলের তেমনি আধুনিক যুদ্ধ বিগ্রহে অকার্যকর। এভাবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে এখন অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামের প্রকট অভাব দৃশ্যমান। যে ক’টি জঙ্গী বিমান আছে সেগুলোও পুরোনো ধাঁচের। এ অবস্থায় ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই উদ্যোগেরই অংশ তুরস্কে বিডা চেয়ারম্যানের সাম্প্ররিক সফর।
এদিকে ভারত বাংলাদেশে সামরিক হামলার হুমকি দিচ্ছে। লালমনিরহাটের বিমানবন্দর গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। আশা করা যায়, অবহেলিত ও উপেক্ষিত প্রতিরক্ষা খাত এখন শির উঁচু করে দাঁড়াবে অন্তর্বর্তীকালীন ড. ইউনুস সরকারের হাত ধরে। ভারতসহ অন্যান্য বৈরী প্রতিবেশীদের হুমকি ও চোখ রাঙানোর জবাব দেবে সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করার মধ্যে দিয়ে।