পানিকেন্দ্রিক পর্যটন স্পটের সম্ভাবনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৫, ৮:৩৯:৩৮ অপরাহ্ন
সম্পাদকীয়
সম্প্রতি সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটনের আনন্দ নিয়ে একটি চমৎকার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে একটি জাতীয় মিডিয়ায়। বর্ষায় রূপ খুলেছে সিলেটের, এই বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে এতে। বলা হয়েছে, প্রতি বর্ষায় সিলেটের প্রকৃতি নিজের রূপ আর স্নিগ্ধতা মেলে ধরে। নান্দনিক সৌন্দর্যের টানে তাই পর্যটকেরাও বর্ষায় ছুটে আসেন। তবে এবার বৃষ্টির মৌসুম শুরু হতে না হতেই পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পর্যটন কেন্দ্রগুলোও হয়ে পড়ে পানিবন্দী। তবে এতেও থেমে থাকেনি সিলেটে ভ্রমণ ও পর্যটন। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটের জনপ্রিয় সবক’টি পর্যটন কেন্দ্রই পানিকেন্দ্রিক, তাই বর্ষা মৌসুমেই এসব পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে দেশ-বিদেশের পর্যটক দর্শনার্থীর ভিড় বেশী থাকে। এবার ঈদের ছুটিতেও প্রতিটি স্পটে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এসেছেন। আগামী শনিবার পর্যন্ত পর্যটকদের এমন ভিড় থাকবে বলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ধারণা। স্থানীয় লোকজন জানান, সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পানি-পাথরের শস্যাখ্যাত সাদাপাথর এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার ‘সোয়াম্প ফরেস্ট’ রাতারগুল ও জাফলং ঘিরেই পর্যটকদের উপস্থিতি থাকে বেশী। এর বাইরে গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি, মায়াবি ঝর্ণা, ডাউকি নদীর তীরের খাসিয়া পল্লী ও পানপুঞ্জি, জৈন্তাপুর উপজেলার নীলপানির নদখ্যাত লালাখাল, উঁচুনিচু টিলা, চা বাগান, রাজবাড়ি, রাংপানি ও শ্রীপুর পিকনিক স্পট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার হাকালুকি হাওরেও পর্যটকেরা আসছেন।
এছাড়া সম্প্রতি পরিচিতি পাওয়া গোয়াইনঘাটের সীমান্তবর্তী সবুজ পাহাড় আর জলপ্রপাতের এলাকা ‘নলজুড়ি’ ঘিরেও পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছেন। সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর তো অন্যতম সেরা পর্যটন স্পট। পিকনিক ও পর্যটন স্পটগুলোর বেশীর ভাগই পানিকেন্দ্রিক। বৃষ্টিপ্রধান সিলেট অঞ্চলে পানিকেন্দ্রিক এসব পর্যটন স্পটের সৌন্দর্য ও গৌরব যুগ যুগ ধরে ভ্রমণ পিপাসু মানুষকে কাছে টানছে। তাই অনেকেই বৃষ্টি বাদলা উপেক্ষা করে বর্ষা মৌসুমেও ছুটে আসছেন এই অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে। এবার আড়াই লাখেরও বেশী পর্যটক এসেছেন সিলেটে। কথা হচ্ছে পানিকেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্রে আনন্দের পাশাপাশি কিছু বেদনা ও বিপদ রয়েছে। প্রতি বছর এসব পর্যটন স্পটের পানিতে ডুবে অনেক দর্শনার্থী ও পর্যটকের মর্মান্তিক মৃত্যু হচ্ছে। এদের অনেকেই সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছেন। গত সোমবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রের বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে ইমন নামে এক কিশোর মারা গেছে। জাফলংয়ে মারা গেছেন আরেকজন। এবার ঈদের ছুটিতে ২ দিনে সাগরে নেমে কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকসহ ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সমুদ্র ও নদী ছাড়াও পর্যটন স্থলের ঝর্ণায় গোসল করতে নেমে প্রতি বছর বহু ভ্রমণ পিপাসুর মৃত্যু ঘটে। সিলেট বিভাগের মাধবকুন্ড জলপ্রপাত যে কতো পর্যটকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, এর খবর কেউ রাখেন না।
যা-ই হোক, এ ব্যাপারে সরকারী ও বেসরকারী উভয় পর্যায়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অবারিত পানি ও এর আধারগুলো মহান সৃষ্টার অপূর্ব নেয়ামত। এটা যাতে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। এসব পর্যটন স্থলে যাওয়ার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ, এমন অভিযোগ অনেকের। রাস্তাঘাট মেরামত ও তৈরী করা হলে এবং পানিকেন্দ্রিক পর্যটন নিরাপদ করে তোলা হলে সিলেট অঞ্চলের এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলো আরো অধিক সংখ্যক দেশী বিদেশী পর্যটক আকর্ষণে সক্ষম হবে। এতে স্ফীত হবে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতি।