সম্পাদকীয় : পিয়ন-বাবুর্চির টাকার গরম!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৫, ৮:৩২:১৩ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘শেখ হাসিনার বাবুর্চির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসায় বাবুর্চির চাকরী পান মোশারফ। তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, মোশারফ শেখ হাসিনার বাবুর্চি হওয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছেন। মোশারফের জনৈক প্রতিবেশী বলেন, মোশারফের পিতা অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। অভাবের সংসার হওয়ায় মোশারফ পড়লেখাও করতে পারেনি। ছোট সময় থেকেই সে পাবনা শহরের একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করতো। তখন তিনি বাবার সম্পত্তির ভাগ পান ৫ শতাংশ জমি। কিন্তু ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার বাসার বাবুর্চির চাকরী পাওয়ার পর থেকে যেনো আলাদীনের চেরাগ পেয়ে যান। বর্তমানে কামদিয়া গ্রামে ২ বিঘা জমির ওপর করেছেন বাড়ি। মাঠে রয়েছে ৩ বিঘা জমি। এছাড়া ফরিদপুর শহরে ২টি বাড়ি, ঢাকা ও ফরিদপুর শহরে একাধিক ফ্লাট প্লট ও গাড়ি রয়েছে। এর আগে হাসিনার পিয়নের ৫/৬শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
উপরের ঘটনাগুলো থেকে স্বৈরাচারী হাসিনার আমলে দুর্নীতির বিস্তারের ব্যাপকতা টের পাওয়া যায়। হাসিনার একজন পিয়ন কিংবা বাবুর্চি যদি কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হতে পারে তবে তার নেতামন্ত্রী ও আমলা বিশেষভাবে আত্মীয় স্বজনরা কতো হাজার কোটি টাকার মালিক, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। বাংলাদেশ সরকার বড়ো বড়ো দুর্নীতিবাজদের বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে ব্রিটেনে হাসিনার সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের পাচারকৃত কয়েক হাজার কোটি টাকার অনেকগুলো সম্পত্তি এবং হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপের পাচারকৃত হাজারো কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ডঃ ইউনুসের সাম্প্রতিক ব্রিটেন সফরকালে এই অর্থ উদ্ধারের ব্যাপারে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, ব্রিটিশ বেনিয়া শাসক স্টারমার এ ব্যাপারে অসহযোগিতা করছেন। টিউলিপের সাথে সম্পর্কের কারণে স্টারমার ড. ইউনুসের সাথে সাক্ষাৎ করতে রাজী হচ্ছেন না। শুধু ব্রিটেন নয়, বিশে^র আরো বহু দেশে স্বৈরশাসক হাসিনার সহযোগী দোসরদের পাচারকৃত লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ও বিপুল সম্পদ রয়েছে। এগুলো উদ্ধার হলে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি অনেকটাই যে চাঙ্গা হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশের মানুষ কায়মনোবাক্যে এটাই চাইছেন। পাশাপাশি দেশে থাকা হাসিনার পিয়ন-বাবুর্চিসহ অন্যান্য দোসর ও সহযোগী নেতাদের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ উদ্ধার করে দেশের জনগণের কল্যাণে ব্যয় করার দাবী সাধারণ জনগণের। এর সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার, যাতে ভবিষ্যতে এদেশের কোন শাসকের ছত্রছায়ায় এমন ধরনের দুর্নীতিবাজদের সৃষ্টি আর কখনো না হয়।