সম্পাদকীয় : শক্তের ভক্ত, নরমের যম
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুন ২০২৫, ৮:০১:৫৯ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদপত্র ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধের ফলে ইহুদীবাদী শাসন ব্যবস্থার প্রতিদিন প্রায় কয়েকশ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। এই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপ এড়াতে ইসরাইলী বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদরা দ্রুত এই সংঘাতের অবসান ঘটানোর আহবান জানিয়েছেন। এই পত্রিকা অনুসারে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাসিক খরচ কমপক্ষে ১২ বিলিয়ন ডলার। ইসরাইলের বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যুদ্ধ যদি দুই সপ্তাহের বেশী স্থায়ী হয়, তাহলে আর্থিক ও কাঠামোগত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না ইসরাইলের পক্ষে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দৈনিক খরচের ক্ষেত্রে প্রধান খরচ হলো ডেভিড’স্ স্লিং এবং অ্যারো-২ ও ৩-এর মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়করণ, যার প্রতিটি ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিহত করার জন্য প্রতি বিমানে ৭ লাখ থেকে ৪০ লাখ ডলার ব্যয় হতে পারে। জেডিএএম এবং এম কে-৮৪ এর মতো বোমা ব্যবহারের পাশাপাশি এফ-৩৫ উড্ডয়নের খরচ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার ডলার। প্রাথমিক অনুমান এই ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইল ইরানের সাথে যুদ্ধে প্রতিদিন ২শ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করছে। অন্যরা এই সংখ্যাটি কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলার বলেছে। সামরিক ব্যয় ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো ও ভবন পুননির্মাণের জন্য ইসরাইলের কমপক্ষে ৪শ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, স্কুল বন্ধ, বিমানবন্দর অর্ধেক খোলা এবং অনেক ব্যবসা বন্ধ। কর্মচারীরা কেবল অতি প্রয়োজনীয় বা জরুরী পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধের ভারী ও চলমান ব্যয়, উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির সাথে মিলিত হয়ে নেতানিয়াহুর সরকারের ওপর যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তির কথা বিবেচনা করার জন্য ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সামরিক ও সরকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরাইলী হামলা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, তবু বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, যুদ্ধ যদি দুই সপ্তাহের বেশী সময় ধরে চলতে থাকে, তবে আর্থিক ও কাঠামোগত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এছাড়া ইসরাইলী ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দৈনিক খরচ ও যুদ্ধের মোট খরচ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৯ দিনে ইসরাইল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য কমপক্ষে ২.৫ বিলিয়ন ডলার এবং যুদ্ধে ৬.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই পরিসংখ্যানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ক্ষয়ক্ষতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের সঙ্গে দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার আরব মিত্রদের মাধ্যমে ইরানের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। তবে ইসরাইলী টেলিভিশন চ্যানেল-১২ এর খবরে বলা হয়েছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ‘অপারেশন রাইজিং লায়নে’র মাধ্যমে ইরানের পারমানবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি নির্মূল করে নিজেদের সামরিক লক্ষ্য খুব দ্রুত অর্জন করতে পারবে বলে প্রত্যাশা ইসরাইলের। আরব কর্মকর্তারা ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, ইসরাইল এই অভিযান শিগগিরই শেষ করতে চায় বলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের আরব মিত্রদের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা দিয়েছে। ইসরাইলী এক কর্মকর্তা গত রোববার ‘টাইমস অব ইসরাইল’কে বলেছেন, ইরান পারমানবিক কর্মসূচী বাতিল করতে রাজী হলে ইসরাইল এখনই বোমা হামলা বন্ধ করার জন্য প্রস্তুত আছে।
লক্ষণীয় যে, আগ্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল পারমানবিক কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে ইরানের পারমানবিক কর্মসুচীয় বন্ধ করার লক্ষ্যে ইরানে হামলা চালিয়েছিলো। এই ভয়াবহ হামলায় ইরানের নেতৃস্থানীয় শীর্ষ ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অনেক পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। জানমালের অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি তো আছেই। কিন্তু ইরান কোন অবস্থাতেই তার পারমানবিক কর্মসূচী থেকে সরে আসার কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি এমনকি এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র নমনীয়তা প্রদর্শন করেনি। বরং পাল্টা হামলা চালিয়ে ইতোমধ্যে ইসরাইলের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করেছে, যা মার্কিন জার্নাল ওয়ালস্ট্রিটের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। আগ্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল শক্তের ভক্ত নরমের যম। ঠিক তার অপর মিত্র দেশ ভারতের মতোই। ভারত সম্প্রতি পাকিস্তানের হাতে মার খেয়ে নরম হয়েছে। এদিকে ইরানের বেধড়ক মার খেয়ে বিপাকে পড়েছে ইসরাইল। কিন্তু যতোই আবেদন নিবেদন ও সমঝোতার চেষ্টা করুক ইরান যে তাকে এবার খুব সহজে ছাড় দেবে না, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে দেশটির ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও অনড় মনোভাবের মধ্যে দিয়ে। যদিও শান্তির কোন বিকল্প নেই, তবুও অনেক সময় শান্তির জন্যও লড়াই হয়। দুর্বৃত্তদের শায়েস্তা ও নিষ্ক্রিয় করতে মারের ওপরে কোন ওষুধ নেই, এই প্রবাদ বাক্যটিই সত্য।