সম্পাদকীয় : ক্রিমিনালাইজেশন থেকে উত্তরণ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২৫, ৮:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন
এক অসাধারণ উক্তি করেছেন অন্তবর্তী সরকারের সাহসী উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, বিগত ১৬ বছরের অর্জিত ক্রিমিনালাইজেশন থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন জরুরী। বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনামলের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে প্রকল্পগুলো ৭০-৮০ শতাংশ হয়ে গেছে এগুলোও শেষ করতে অনেক টাকা খরচ করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এসব অবকাঠামো ভেঙে ফেলা দরকার। এর কারণ হলো, এসব প্রকল্পের কোন অর্থনৈতিক ব্যবহার (উপযোগিতা) নেই। কিন্তু দায় ঠিকই পরিশোধ করতে হবে।
বলা বাহুল্য, বিগত স্বৈরশাসক হাসিনার শাসনামলে সব খাতকেই ক্রিমিনালাইজড বা দুর্বৃত্তায়নের বৃত্তে আবদ্ধ করে ফেলা হয়। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য ও তার অলিগার্কদের স্বার্থই ছিলো তখন সবকিছুর উর্ধ্বে। এজন্য বড়ো বড়ো মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জানা গেছে, হাসিনার পরিবার থেকে মেগা প্রকল্প গ্রহণকে উৎসাহিত করা হতো। এতে তাদের লুটপাট ও অর্থ ভাগাভাগির সুযোগ সৃষ্টি হতো। এভাবে বিগত দেড় দশকে দেশে বহু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এগুলোর অধিকাংশই ছিলো অপ্রয়োজনীয়। অথচ প্রতিটি প্রকল্পের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ছিলো অস্বাভাবিক বেশী। প্রকৃত ব্যয়ের ২/৩ গুণ এমনকি এর চেয়েও বেশী। পদ্মা সেতুকে অপ্রয়োজনীয় বলা যাবে না। কিন্তু এই সেতু নির্মাণে ২/৩ গুণ বেশী অর্থ ব্যয় ধরা হয়েছে, যা হাসিনা সরকার লুটপাট করেছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পদ্মা সেতুতে যে ব্যয় করা বা ধরা হয়েছে, তা দিয়ে এমন ২/৩ টি সেতু নির্মাণ সম্ভব হতো যদি এই অর্থ প্রকৃত অর্থে কাজে লাগানো হতো। শেখ হাসিনার শাসনামলে যেসব মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, ঢাকা-ফরিদপুর-যশোর রেল লাইন, যমুনা রেল সেতু, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন। এসব প্রকল্পের অনেকগুলোতে সত্যিকার জাতীয় অর্থনৈতিক প্রয়োজনের চেয়ে সরকারের নানা বিবেচনা ও খেয়ালখুশী প্রাধান্য পেয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এগুলোর মধ্যে অনেক প্রকল্প এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকার তথা দেশের অর্থনীতির জন্য। ঋণ করে বাস্তবায়ন করা অনেক প্রকল্পের সুদের অর্থ এদেশকে শোধ করতে হবে বছরের পর বছর ধরে। অনেক অসমাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যেমন অনেক অর্থের প্রয়োজন তেমনি এগুলো বাস্তবায়নের পর ন্যুনতম আয়ও অর্জিত না হওয়ার কিংবা জনগণের তেমন কোন ফায়দা লাভের সম্ভাবনা নেই। বরং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি বছর বহু অর্থ ব্যয় করতে হবে। তাই উপদেষ্টা এসব প্রকল্প বাতিলের পরামর্শ দিয়েছেন, অনেকগুলোর অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার কথা বলেছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বিগত সরকার এক ভয়ানক দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে বন্দী করেছিলো গোটা জাতিকে। আর এই ক্রিমিনালাইজেশন থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্ততঃ বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।