সম্পাদকীয় : মিথ্যার জনপদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুলাই ২০২৫, ৯:১৬:৪৭ অপরাহ্ন
ভারতকে এখন বিশ্বের মানুষ মিথ্যাবাদী দেশ বা ভুয়া খবরের জনপদ এবং তার অধিকাংশ জনগণকে মিথ্যাচারী বলে জানে। তারা বিনা প্রয়োজনে যেমন মিথ্যা বলে তেমনি একটি মিথ্যাকে ঢাকতে গিয়ে আরো অনেক মিথ্যার অবতারণা করে। বিশেষভাবে ভারতীয় মিডিয়ার কারণে দেশটির মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিচিতি অর্জিত হয়েছে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের বিষয়টি প্রকাশ পেলেও নিতান্ত নির্লজ্জভাবেই এমন অপকর্ম চালিয়ে যেতে দেখা যায় তাদেরকে।
সবাই জানেন কিছুকাল আগে ভারত পাকিস্তানের সাথে এক সংক্ষিপ্ত অথচ তীব্র যুদ্ধে অনেকগুলো দামী যুদ্ধবিমান হারায়। এই অপমান ও ক্ষয়ক্ষতি ধামাচাপা দিতে এ পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মিথ্যাচার করেছে এবং শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো কাজ করেছে, যা রীতিমতো হাস্যকর ও অযৌক্তিক। সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে যুদ্ধবিমানের ক্ষয়ক্ষতির জন্য কাকে দায়ী করলেন ভারতের সেনা কর্মকর্তা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোর সময় ভারতের যুদ্ধবিমান নষ্টের দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর চাপালেন ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের ডিফেন্স অ্যাটাশে ক্যাপ্টেন শিব কুমার। তার বক্তব্য হচ্ছে, অভিযানের শুরুতেই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর জন্য গন্ডি কেটে দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর আঘাত করতে নিষেধ করেন। ভারতকে কিছু যুদ্ধবিমান সেই কারণেই হারাতে হয়েছে। অদ্ভূত কথা বটে। একটি দেশের যুদ্ধ বিমান অপর একটি বৈরী দেশের অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালানোর সময় তার প্রতিরক্ষা বিশেষভাবে আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি দেয়াই স্বাভাবিক, এটা সমর কৌশলেরই অংশ।
কিন্তু এক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কার্যকর হামলা পরিচালনা, পাল্টা হামলা ও আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে নিজ দেশের বিমান বাহিনীকে যুদ্ধের কৌশল নিয়ে পরামর্শ দেবেন, এমনকি এ সময় পাকিস্তানের কোন সামরিক ঘাঁটি বা আকাশ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার ওপর আঘাত করতে নিষেধ করবেন, তা অবিশ্বাস্য ও সুদূর কল্পনা। কিন্তু এই কর্মকর্তা এমন অবাস্তব যুক্তি দেখাচ্ছেন পাকিস্তানের বিমান বহরের সাথে ভারতের বিমান বহরের ডগ ফাইট বা সম্মুখ যুদ্ধে পরাজয়ের কারণ হিসেবে। সচেতন মহল এটাকেও বিভিন্ন ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তার আগের নানা অজুহাত, দায়সারা মন্তব্য তথা মিথ্যাচারের মতোই বলে করছেন।
তাদের মতে, ভারত তার বিমান বাহিনী তথা সামরিক বাহিনীর দুর্বলতা স্বীকার করতে নারাজ। যদিও আন্তর্জাতিক সামরিক বিশেষজ্ঞরা বিষয়টির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভারতের পরাজয়ের বিভিন্ন কারণ উপস্থাপন করেছেন আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ও পত্রপত্রিকা এবং মিডিয়াসমূহে। খোদ রাফাল বিমানের নির্মাতা দেশ ফ্রান্স রাফাল বিমান ধ্বংসের জন্য ভারতীয় পাইলটের অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন কড়া ভাষায়। পাকিস্তান যুদ্ধ জয়ের জন্য তাদের সেনাপ্রধানসহ যোদ্ধা পাইলটদের পুরস্কৃত করেছে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, সামরিক কর্মকর্তা ও তাদের মিডিয়াগুলোকে নির্লজ্জের মতো, এ বিষয়ে মিথ্যাচার ও ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র চেষ্টা চালাতে দেখা যাচ্ছে।