ড. ইউনুসের শপথ ও প্রতিশ্রুতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০১:১৩ অপরাহ্ন
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও আশাব্যঞ্জক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, স্বৈরাচার পতনে যাতে ১৬ বছর অপেক্ষা করতে না হয়, অন্তবর্তী সরকার সেই কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, জুলাইয়ের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা নতুন শপথ নেবো, যাতে স্বৈরাচার আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। আশাকরি আগামী দিনে কেউ স্বৈরাচার হতে চাইলে জনগণ সঙ্গে সঙ্গে তাদের পতন ঘটাবে। জনগণ রাস্তায় নামলে যেনো কোন শক্তি তাদের থামাতে না পারে। ইতোমধ্যে বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের মাস জুলাই শুরু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র বৈপ্লবিক আমেজ ও আবহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। গত বছরের এমন দিনে দেশজুড়ে শুরু হয়েছিলো স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। কোটা ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের সূচনা হলেও এর গভীরে ছিলো দেড় দশকের স্বৈরশাসন বিরোধী বহ্নিশিখা, যা মাস খানেকের মধ্যে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিলো সারাদেশে। আর এরই ফলশ্রুতিতে পতন ঘটেছিলো বিশে^র অন্যতম নিষ্ঠুর এক নারী স্বৈরশাসকের। প্রতিবেশী দেশে তার পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে দেশ হয়েছিলো স্বৈরাচারমুক্ত, স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছিলো গোটা জাতি। শেখ হাসিনা জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সংগঠন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিবেদনে বর্তমান সময়ের এক অন্যতম বর্বর ও ঘৃণ্য স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত ও স্বীকৃত হয়েছেন। নিজ দেশের জনগণের ওপর তার পরিচালিত স্টিমরোলারের নীচে চাপা পড়ে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক লাখ। তার আয়নাঘর নামক নির্যাতন সেলগুলো কমিউনিস্ট শাসনামলে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাইবেরিয়ায় ‘গুলাগ’ নামক কারাগারের হিমশীতল প্রকোষ্টগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গুলাগের মতো হাসিনার আয়নাঘর থেকে জীবন্ত ফিরে আসার ঘটনা খুবই কম। কতো মানুষ যে আয়নাঘরে যাওয়ার পর চিরতরে হারিয়ে গেছে, তার পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি।
যা-ই হোক, সীমা ত্যাগের বিনিময়ে এদেশের ছাত্র-জনতা এই ঘৃণ্য খুনী স্বৈরাচারী শাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য অকাতরে দিতে হয়েছে জীবন, ঢালতে হয়েছে অজস্র রক্ত। নতুন স্বাধীন দেশে এখন তার বিচার চলছে। স্বাধীন দেশ এজন্য বলা উচিত কারণ শেখ হাসিনা ও দল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছিলো প্রতিবেশী আগ্রাসী দেশ ভারতের কাছে। শুধু ক্ষমতার লোভে মীরজাফর-ঘসেটি বেগমদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো এই ডিক্টেটর। হিটলার ও তার দেশের মানুষকে হত্যা করেনি যেভাবে করেছে শেখ হাসিনা। হিটলার একনায়ক হলেও নিজের মাতৃভূমির স্বাধীনতাকে ভিনদেশের পাতিলে বিসর্জন দেয়নি। কিন্তু হাসিনা তা-ই করেছেন। শেখ হাসিনার এই দুরাচারী স্বৈরশাসক হয়ে ওঠার পেছনে বহু কারণ দায়ী। এর অন্যতম হচ্ছে বিদ্যমান সংবিধান প্রচলিত নির্বাচন ও শাসন ব্যবস্থা। এগুলোর মারাত্মক ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে গত অর্ধ শতাব্দিরও বেশী সময়ে দেশের শাসন ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আর এর সংস্কারের প্রত্যয় ও অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছে বর্তমান বিপ্লবত্তোর অন্তর্বর্তী সরকার। এদেশে যাতে কোন রাজনৈতিক নেতা বা দল পুনরায় স্বৈরাচারী ও একনায়ক হয়ে ওঠতে না পারে সেজন্য চলছে এই সংস্কার। দেশের প্রায় সকল দল তথা জনগণ এই সংস্কারের পক্ষে। তাই এটা প্রতিহত করা বা ঠেকানো কোন অশুভ শক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। অন্ততঃ আমরা এটা মনে প্রাণে বিশ^াস করি। জনগণ আশা করে ডঃ ইউনুসের নেতৃত্বে দেশের শাসন ব্যবস্থায় এমন ইতিবাচক সংস্কার হবে, যা এদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে, জাতিকে দেখাবে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সুশাসনের পথ।