সম্পাদকীয় : উল্লাস পালের উল্লাস!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০২৫, ৯:৩৯:০৪ অপরাহ্ন
সম্প্রতি উল্লাস ও উচ্ছ্বাস করার মতো একটি রিপোর্ট করেছে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া। ‘শিক্ষাজীবনে কোটা নেননি শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস, বিসিএসে পেলেন প্রশাসন ক্যাডার’ শীর্ষক এই রিপোর্টে উল্লাস পাল নামের এক শারীরিক প্রতিবন্ধী অথচ অত্যন্ত মেধাবী যুবকের অসাধারণ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৪৪ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে নিজের পছন্দের প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল। অন্যান্য সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাক্সিক্ষত সফলতা পেয়ে আনন্দিত শিক্ষাজীবনে কখনো শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা না নেয়া উল্লাস। এ প্রসঙ্গে উল্লাস বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় ও চাকরী ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এতোদূর এসেছি। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও কোটা নিইনি। সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকেছি।’
বলা বাহুল্য, উল্লাস পালের মতো উদ্যমী ও মেধাবী যুবক জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যত। লাখো তরুণ যুবা শিক্ষার্থীর অনুপ্রেরণার উৎস। জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে না পারলে কোন ব্যক্তি এমনকি কোন জাতি সাফল্য অর্জন করতে পারে না। এদিক দিয়ে উল্লাস জীবন সংগ্রামের এক অতুলনীয় প্রতীক, দৃষ্টান্ত। জাতি হিসেবে আমরা কয়েক যুগে অনেক পিছিয়ে পড়েছি। কারণ আমরা জীবন সংগ্রামের চেয়ে আলস্য, প্রতারণা ও সুবিধাবাদী কোটা’র পন্থা অবলম্বন করেছি। সঠিক পথে না গিয়ে শর্টকাট পথে উন্নতি করতে চেয়েছি। পড়াশোনা, চাকরী সকল ক্ষেত্রেই এমনটি করেছি। তাই এর ফল হয়েছে ভয়াবহ। কেউ কেউ সাময়িক লাভবান হলেও জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হয়নি, কাজে লাগানো হয়নি মেধা ও মেধাবীদের। আমাদের মেধাবী তরুণ যুবকরা যখন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ইতালি, ফিনল্যান্ড ইত্যাদি দেশের গবেষণা কেন্দ্রে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, নতুন নতুন উদ্ভাবনের দ্বারা আলোকিত ও সমৃদ্ধ করছে সংশ্লিষ্ট দেশকে, তখন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর জন্য আমরা ২০/৩০ লাখ টাকা বেতন দিয়ে বিদেশী পরিচালক প্রকৌশলী নিয়োগ করছি। গার্মেন্টস শিল্প চালানোর জন্য ২/৩ লাখ বেতনে বিদেশী অপারেটর, সুপারভাইজার ও প্রকৌশলী আনছি। এটা বড়োই লজ্জার, বড়োই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। যা-ই হোক, এখানে কোটার কথা বলতেই হয়। এই অভিশপ্ত কোটা সিস্টেমই স্বৈরাচারী হাসিনাকে ডুবানোর উসিলা হয়েছিলো। বছরের পর বছর এই কোটা সিস্টেমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের লোকজনকে শিক্ষাদীক্ষায় সার্টিফিকেট ও চাকরী দিয়েছে। নিতান্ত গবেট ছাত্রও সুযোগ পেয়েছে উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার এবং কথিত পড়াশোনা তথা সার্টিফিকেট লাভ শেষে লোভনীয় চাকুরী পাবার।
এভাবে কলেজ বিশ^বিদ্যালয় ও প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে ঠাঁই পেয়েছে অযোগ্য ও অদক্ষ শিক্ষার্থী। তারাই শেষ পর্যন্ত দুর্নীতির দিগন্ত ও দুয়ার খুলে দিয়েছে। হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। কিন্তু প্রতারণা ও দুর্নীতির কোটা সিস্টেমের হোতাদের শেষ রক্ষা হয়নি। গত বছরের এমনই জুলাই মাসে কোটা আন্দোলনের জের ধরে পতন ঘটেছে চরম দুর্নীতিবাজ ও অসৎ হাসিনা সরকারের। উল্লাস পালের কোটার ঘটনাটি আজ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে গত জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী কোটা আন্দোলনের কথা। কোটা পাবার যোগ্য হওয়া সত্বেও কোটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো উল্লাস পালের সাফল্যে আমরা উল্লসিত, আনন্দিত। তাকে অভিনন্দন।