আলুর দেশে আলু আমদানি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩০:০৯ অপরাহ্ন
কি আশ্চর্য! উর্বর মাটির দেশ বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত বিদেশ থেকে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যে দেশের মাটিতে শুধু বীজ ফেললেই অনেক ফসল শাক সবজি ও গাছ জন্মে, সেই বদ্বীপের মাটি এখন এদেশের মানুষের জন্য আলু জন্মাতে ব্যর্থ। ভাবতেও আশ্চর্য লাগে।
গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘আলু আমদানি করবে সরকার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আলুর বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ৩০ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ হায়দর আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজারে আলু সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে আলু আমদানি করবে সরকার। আগ্রহী আমদানিকারকদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার অনুরোধ জানানো হলো।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অর্থ বছরে ২০২২-২৩ সালে দেশে উৎপাদিত হয় ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টন। এর আগের অর্থ বছর অর্থাৎ ২০২১-২২ সালের তুলনায় উৎপাদন বাড়ে ১ লাখ ৩৩ হাজার টন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিআরসি) তথ্য অনুসারে ২০২১ সালে দেশে আলুর চাহিদা ছিলো ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টন। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, দেশে যখন আলুর উৎপাদন বাড়ছে এবং বর্তমানে চাহিদার বেশী আলু উৎপাদিত হচ্ছে দেশে সরকার মহামূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ ডলার সংকটের কারণে এখন দেশের অর্থনীতি মারাত্মক পরিস্থিতির দিকে ধাবমান। বিআরসি’র দেশে চাহিদার বিপরীতে ১৬ লাখ টনের মতো আলু উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাজারে আলুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলু দাম বাড়াচ্ছে। তারা হিমাগার থেকে চাহিদা অনুসারে আলু খালাস করছে না। এখানেই লুকিয়ে আছে থলের বিড়ালটি। সরকার সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়, একথা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তাদের বলতে শোনা গেছে। বর্তমানে দেশের প্রধান খাদপণ্যসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্য সিন্ডিকেটিং অর্থাৎ বাজার কারসাজির শিকার। সরকারের শীর্ষ মহলের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও স্বার্থের ভাগাভাগিতে এই অসাধু তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেটিং ব্যবসায়ীরা। মাঝে মাঝে এদেরই দু’একজন বা তাদের মুখপাত্র কাউকে সিন্ডিকেট নিয়ে প্রহসনমূলক মিথ্যাচার করতে দেখা যাচ্ছে। তারা নিজেরাই যখন সিন্ডিকেটের অংশ, তখন তারা সিন্ডিকেট ব্যবসা ভাঙ্গবে কীভাবে? এ প্রশ্ন তো সবার। খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েই সিন্ডিকেটের সদর দফতর, এমন অভিযোগ অনেকের। আর তাই অর্থনৈতিক গোয়েন্দাদের দেয়া তালিকা পাওয়া সত্বেও অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় আলু আমদানির হুমকি দিয়ে আলুর দাম কিছুটা কমানো যায় কি-না, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে কিছু সরকারী দপ্তর-অধিদপ্তর থেকে। কিন্তু এটাও আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়। ডিমের ক্ষেত্রেও এ ধরনের কোন হুমকি কাজে আসেনি। আসলে হুমকি দিলেও সরকার যে ডিম যে আমদানি করবে না, এটা অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের জানা। অর্থাৎ তলে তলে সবই জানা। এখন আলু নিয়েও সেই পুরোনো হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। এতেও কাজের কাজ কিছু হবে না, এমন অভিমত সচেতন মহলের। বলা বাহুল্য, সর্ষেতে যখন ভূত, তখন সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো অসম্ভব। আর যখন আলুর গোড়া কেটে ফেলা হচ্ছে তখন গাছের পাতায় পানি ঢেলে যে কোন ফায়দা হবে না, এটাও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এদেশের পোড় খাওয়া ভুক্তভোগী জনগণের।