ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হোক সকল হৃদয়
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২৫, ৮:১৯:১০ অপরাহ্ন
সম্পাদকীয়
পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। বাংলাদেশসহ বিশে^র সকল দেশের মুসলিম ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও অনুপ্রেরণা নিয়ে পালন করবেন এই পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আজহা মূলত: পশু কুরবানীর জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এদেশের মানুষ ইতোমধ্যে ঈদ উপলক্ষে পশু কুরবানীর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। অনেকে ইতোমধ্যে কুরবানীর পশু ক্রয় করেছেন, অনেকে ক্রয়ের চেষ্টা করছেন। এই কুরবানীর পশুর মাংস কুরবানীদাতারা নিজে খাবেন এবং এর একটি অংশ আত্মীয় স্বজন ও গরীব দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করবেন। সত্যি বলতে কি, এদেশের গরীব এমনকি সীমিত আয়ের অনেক মানুষের পক্ষে বাজার থেকে গরু বা খাসীর মাংস ক্রয় করে খাওয়া সম্ভব হয় না। এমন বহু দরিদ্র লোক আছেন, যারা শুধুমাত্র ঈদুল আজহা অর্থাৎ কুরবানীর ঈদেই গরু-খাসির মাংস খাওয়ার সুযোগ পান। তাই কুরবানীদাতাদের উচিত কুরবানীর পশুর মাংস অত্যধিক পরিমাণে ফ্রিজে না রেখে দেশের গরীব দুঃখী মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়া। এটাও কুরবানী ঈদের এক মহান শিক্ষা। কুরবানী মানে ত্যাগ। এই ত্যাগটুকু স্বীকার করতে না পারলে কুরবানী ঈদ উদযাপনের মাহাত্ম্য ও সৌন্দর্য মলিন হতে বাধ্য।
অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়, এবার বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বিগত বছরগুলোর তুলনায় কম। ঈদে বহুল ব্যবহৃত পেঁয়াজ রসুন আদাসহ বিভিন্ন মশলা ও গরম মশলার দাম গত বছরের চেয়ে অনেক কম। কোন কোনটা প্রায় অর্ধেক। আর এটা সম্ভব হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুশাসন এবং দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াইয়ের কারণে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুষ্ঠু সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে বাজারে অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙছে। আমদানিকারক ও মজুতদার ব্যবসায়ীদের মনোপলি অর্থাৎ একচেটিয়া কুক্ষিগতকরণের ব্যবসার নেটওয়ার্ক ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এজন্য দক্ষ বাণিজ্যমন্ত্রীর ভূমিকা অতুলনীয় ও নজিরবিহীন। বিগত বছরগুলোতে কুরবানীর ঈদে মাংস পেলেও দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের দুর্ভাবনা ছিলো, এই মাংস রান্নার জন্য মশলাপাতি পাবে কোথায়। কিন্তু এবার এগুলোর দাম সহনীয় হয়ে আসায় তাদের সেই দুর্ভাবনাও দূর হয়েছে।
এবার এমন এক সময়ে এদেশের মানুষ ঈদুল আজহা অর্থাৎ কুরবানীর ঈদ পালন করছেন, যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এছাড়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মেঘ জমতে দেখা যাচ্ছে। আগামী দিনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে এই উত্তেজনা ও অস্থিরতা। তবে দেশের রাজনীতিবিদ ও সচেতন মহলের সদিচ্ছা ও দেশপ্রেম এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে। আমরা আশা করবো, পবিত্র ঈদুল আজহার ত্যাগের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন, সংকট উত্তরণে এগিয়ে আসবেন। পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের সবাইকে ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করুক, এই প্রার্থনা মহান আল্লাহ পাকের দরবারে।