ড. ইউনূসের দিক নির্দেশনা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩০:২৩ অপরাহ্ন
নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস গতকাল ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন। দায়িত্ব নিয়েছেন দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে। ড. ইউনূসের এই নতুন দায়িত্ব গ্রহণে এদেশের আপামর জনগণ অত্যন্ত উৎফুল্ল ও আশাবাদী। কেউ কেউ নিজেদের দলীয় দৃষ্টিকোণ ও স্বার্থ থেকে তাঁর ক্ষমতাগ্রহণকে ভিন্ন চোখে দেখলেও দেশের সাধারণ মানুষ তাঁকে পেয়ে উল্লসিত, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তরুণ ও যুব সমাজ। দেশে ফিরে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তিনি আবেগঘন বক্তব্য রেখেছেন। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও দিক নির্দেশনা কিছু কথা বলেছেন এ সময়। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন এবারের দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ আবু সাঈদসহ অগণিত নিহত ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের। দেশকে পুনর্গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
জানা গেছে, ড. ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের শর্ত হিসেবে কয়েক বছর তাঁকে ক্ষমতায় থাকার শর্ত দিয়েছেন, যাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেরামত ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়। তেমন আশ্বাস পেয়েই তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। ড. ইউনূস তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের পাশাপাশি আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের পরামর্শ নিয়ে যে দেশ পরিচালনা করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি সর্বাগ্রে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সব ধরনের বিশৃংখলা, লুটপাট ও ভাংচুরের ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
তবে বাংলাদেশে ফেরার আগের দিন ভারতের একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল এনডিটিভিকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল মিয়ানমারে এর প্রভাব পড়বে।’ একথা অনস্বীকার্য যে, হাসিনাকে অবৈধভাবে ১৬ বছর ক্ষমতায় রাখার পেছনে ছিলো ভারত। আর এখন হাসিনার পতনের পর এই ভারতই বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য নতুন করে চেষ্টা করছে। তাই বাধ্য হয়ে ড. ইউনূস ভারতকে এই প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন, যাতে তারা নিজেদের স্বার্থে এই অপকর্ম থেকে বিরত থাকে। ভারত কর্তৃক বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অতিরঞ্জিত প্রচারণা, কল্পিত জঙ্গীবাদ উত্থান ও নিন্দাবাদের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ। জনসংখ্যার অধিক যুব সম্প্রদায়। জীবনে তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, দেশে এতোকাল আইন শৃংখলা ছিল না বলেই আজ এই অস্থিতিশীলতা।’ এদেশের ছাত্র জনতার আন্দোলন বিরোধী বহিঃশক্তি ভারত ও এদেশের আওয়ামী অপশক্তি যখন দেশের বর্তমান শৃংখলাহীনতার জন্য এদেশের আন্দোলনকারী বিপ্লবী জনগোষ্ঠীকে দোষারোপ ও গালমন্দ করছে, তখন ইউনূস এসবের জন্য স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলের আইন শৃংখলাহীনতার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর এটা দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস। মানুষ এখন মুক্তির স্বাদ নিচ্ছে। স্বৈরাচারের পতন উদযাপন করছে। সেই উদযাপনে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, সেখান থেকেই স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রই অস্থিতিশীলতার ওষুধ।
নিঃসন্দেহে ডঃ ইউনূসের এসব বক্তব্য নতুনভাবে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ইঙ্গিত। বাংলাদেশের দীর্ঘকালের বঞ্চিত, শোষিত ও নিপীড়িত কোটি কোটি মানুষ এখন এই গাইডলাইন অনুসরণ করে এগিয়ে যাবে শান্তি শৃংখলা ও সমৃদ্ধির পথে, এমন প্রত্যাশা সকল সচেতন ও বিবেকবান মানুষের।