গভর্নরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩০:৪০ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডঃ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট আছে। রিজার্ভের সংকট রাতারাতি দূর হবে না। সম্প্রতি সচিবালয়ে এক বৈঠকে তিনি একথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, খুব সাবধানে হাঁটতে হবে। হাঁটতে হবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এগুলো ঠিক করা খুবই সম্ভব। আমরা আমাদের যে ডেভেলপমেন্ট পার্টনার আছে, তাদের সাথে আলোচনা করবো, কিভাবে রিজার্ভ আরো বাড়ানো যায়। সব মিলিয়ে চেষ্টা হবে এবং ইনশাল্লাহ কয়েক মাস পর ফল দেখা শুরু করবো।
গভর্নর আরো বলেন, বাজারে যদি চাঁদাবাজিটা আর একটু কমিয়ে দেয়া সম্ভব হয়, এবং যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি, তবে ৫-৬ মাসের মধ্যে আমরা মূল্যস্ফীতি একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় নিয়ে আসতে পারবো। অসাধারণ আন্তরিক ও খোলামেলা গভর্নরের এসব কথা। জনগণের মাঝে আশা সঞ্চার ও স্বপ্ন দেখার মত কথাবার্তা। স্বৈরাচারী শাসনামলে কখনোই এসব কথা বলতে দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কিংবা সংশ্লিষ্ট কোন মন্ত্রী বা সচিবকে। অতীতে সব সময়ই রিজার্ভ নিয়ে ধোঁয়াটে অবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে জনগণকে। রিজার্ভের অবস্থা যখন সংকটজনক তখনও বলা হয়েছে, দেশে কোন রিজার্ভ সংকট নেই। শুধু রিজার্ভ নয়, অর্থনীতিসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সন্দেহ সংশয়ের অন্ধকারে রাখা হয়েছে দেশের মানুষকে। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশের প্রত্যেক মানুষের অধিকার রয়েছে সরকারের প্রায় সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে জানার। বিগত স্বৈরশাসনামলে মূল্যস্ফীতি রিজার্ভ, রফতানি আয় ও জিডিপি সম্পর্কে মিথ্যা পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। আর এসবের উপর ভিত্তি করে সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট ও তাঁবেদার অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা অজ¯্র বাগাড়ম্বর ও মিথ্যার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি যখন ভেতরে ভেতরে ফোকলা হয়ে গেছে, তখন তারা তারস্বরে প্রচার করেছেন, দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে ইত্যাদি। এতে যে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে, তা হচ্ছে দেশের সম্ভাবনাময় জনশক্তি বিশেষভাবে বিদগ্ধ জনগোষ্ঠী দেশের এই সংকটে কোন অবদান রাখতে পারেনি। তারা দেশের সঠিক অবস্থা জানলে তো অবদান রাখবেন। এভাবে সরকারকেও সংকট মোকাবেলায় কোন সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেননি তারা। তা সত্বেও অর্থনীতিবিদ বর্তমান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ডঃ আহসান মনসুরের মতো ব্যক্তি নিজেদের ধারণা ও বিশ্লেষনের উপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতিকে সঠিক নির্দেশনা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। বছরের পর বছর ধরে ডঃ মনসুর আরেক সাবেক গভর্ণর সালেহ উদ্দিন আহমদ এবং প্রয়াত ইব্রাহীম খলিলের মতো অর্থনীতিবিদরা সরকারের ভুল নীতির সমালোচনা করেছেন এবং সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। এমনকি সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-এর ডঃ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্যসহ তার সহকর্মীরাও একইভাবে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। হাসিনার জনৈক মন্ত্রী ডঃ দেবপ্রিয়কে নিয়ে অশোভন ভাষায় সমালোচনা ও বিদ্রুপ করতেও দেখা গেছে। এভাবে বিগত ষোলটি বছর চলেছে আলো-আঁধারের লড়াই। শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে সত্যের। সত্য প্রকাশিত হয়েছে স্বমহিমায়, স্বগৌরবে। এখন স্পষ্টভাবে দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার পাশাপাশি দুর্বলতাটুকুও প্রকাশে সক্ষম হচ্ছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, পরিচালক, নীতি নির্ধারকেরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডঃ মনসুর বার বার একটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন, যার ওপর অবশ্যই জোর দিতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে আমাদের সকলের। সেটা হচ্ছে চাঁদাবাজি। বলা বাহুল্য, নিত্যপণ্যসহ সকল পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধির জন্য চাঁদাবাজি বিশেষভাবে দায়ী। দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় হ্যান্ড মাইক নিয়ে সকল দোকানী ব্যবসায়ীদের কাউকে চাঁদা না দেয়ার আহবান জানাচ্ছে। অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এ দৃশ্য। আশা করা যায়, এভাবে চাঁদাবাজিসহ অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির সকল বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতা এভাবে দূর করা সম্ভব হবে। সম্ভব হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশ গড়ে তোলা, এমন প্রত্যাশা জনগণের।