বিদ্যুৎ খাতে স্বস্তির খবর
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:৩০:২৪ অপরাহ্ন
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বাধ্য না হলে বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাসের দাম সরকার বাড়াবে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী উপদেষ্টার এই বক্তব্য দেশের সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষের জন্য যে একটি স্বস্তির বার্তা এতে কোন সন্দেহ নেই।
বলা বাহুল্য, মানুষ বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ চায়। একই সঙ্গে চায় মূল্য যাতে না বাড়ে। কিন্তু গত ১৫ বছরে বিদ্যুত দাম ১৮-১৯ বার গ্যাসের দাম ১০-১২ বার বেড়েছে। যা প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহে কখনো ঘটেছে, এমন নজির নেই। এ ধরনের পদক্ষেপ যে গণবিরোধী ও দেশের জনগণকে শোষনের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট ও অনিয়মের দায়ভার জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার জন্যই এভাবে উপর্যুপরি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে সচেতন মহলের অভিমত। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই এ বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণসহ প্রতিবাদ করে আসছেন।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা আরো বলেছেন, আমরা বাধ্য না হলে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াবো না। আজকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে অর্থাৎ বিইআরসি’র বাইরে সরকার আপাতত দাম বাড়াবে না, সেটা সেই কারণেই। আপনাদের এই প্রত্যাশাকে সম্মান করার জন্য। যদিও আইনে সরকারকে দাম বাড়ানোর ক্ষমতা দেয়া আছে। কিন্তু আমরা এটা করবো না। তিনি আরো বলেন, এটা একটা জনপ্রত্যাশার সরকার। রাজপথে আত্মদানের পর এই সরকার এসেছে। তাই অনেক কিছুরই পরিবর্তন দেখতে পাবেন। মিথ্যা গালগল্পের দিন শেষ। মানুষ যেটা চায়, মানুষ যেভাবে খুশি হয়, সেদিকেই আমাদের যেতে হবে। জনপ্রত্যাশা পূরণে আমাদের যা যা করণীয়, তা আমরা করবো।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার উপরোক্ত বক্তব্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাত নিয়ে সরকারের বর্তমান নীতির একটি স্পষ্ট প্রকাশ। এতোদিন দেশের মানুষের আয় না বাড়লেও দফায় দফায় বেড়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষের বিদ্যুতের এই উচ্চমূল্য পরিশোধের ক্ষমতা আছে কি-না, তা বিবেচনা না করেই সরকার বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। কিন্তু জ্বালানি উপদেষ্টার বক্তব্য আগের সরকারের গৃহীত শোষণমূলক নীতিমালার সম্পূর্ণ বিপরীত।
গত ১৭ আগস্ট একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘বিদ্যুৎ খাতে ইচ্ছেমতো লুট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের আমলে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ খাত। সাড়ে ১৫ বছরে কোন দরপত্র ছাড়াই বেসরকারী খাতে শতাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এর বেশির ভাগই কোন কাজে আসেনি। সরকারী হিসেবে উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হলেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি। এমনকি দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কতো, তারও সঠিক কোন হিসাব নেই পিডিবি’র কাছে। সবার জন্য সরবরাহ নিশ্চিত না করে শুধু সংযোগ দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়নের কৃতিত্ব জাহির করা হয়েছে। প্রাপ্ত হিসাবে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। একই সময়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই লুটপাট করা হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু সক্ষমতা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে গেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেশির ভাগের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নি¤œমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও রক্ষণাবেক্ষণে চরম অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের সকল দুর্নীতি ও অনিয়মের উৎস যে তিনি নিজে এতে কোন সন্দেহ নেই।
বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবি’র একাধিক কর্মকর্তার দাবি, পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমানের কর্মকান্ডের তদন্ত করা হলে এ খাতের বড়ো বড়ো অনিয়ম ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। এছাড়া নসরুল হামিদ, আবুল কালাম আজাদ ও আহমদ কায়কাউসের মতো বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সাবেক শীর্ষ ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে, এমন অভিমত সংশ্লিষ্ট সচেতন মহলের।