শক্তের ভক্ত নরমের যম
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫২:২৯ অপরাহ্ন
গতকাল একটি শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিকে ‘পানি বন্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিবোচিত হতে পারে : ভারতের পররাষ্ট্র মুখপাত্র’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের প্লাবন রোধে ও পানি বণ্টন নিয়ে ওই দেশের নতুন মেকানিজমের প্রস্তাব বিবেচিত হতে পারে। গত ৩০ আগস্ট সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ইঙ্গিত দেন তিনি। এছাড়াও তিনি বলেন, বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির জন্য অনেকে ভারতকে দায়ী করেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভারত বিরোধী প্রচার চলছে।
লক্ষণীয় যে, গত ২২ আগস্ট বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সাক্ষাতে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ও পানি বণ্টন নিয়ে ড. ইউনুস কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে যে ধরণের বোঝাপড়া ও মেকানিজম (ব্যবস্থা) রয়েছে, সেই অনুযায়ী অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ও বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী হওয়ার প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। তাদের পানি সম্পদ ব্যবহার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহুদিন ধরেই স্বীকৃত কিছু ‘মেকানিজম’ (ব্যবস্থাপনা) রয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশকে ভারত নিয়মিতভাবে ঠিক সময়ে সব তথ্য সরবরাহ করে। তিনি বলেন, নতুন কোনও মেকানিজম বা ব্যবস্থাপনা প্রস্তাব প্রচলিত ব্যবস্থার উন্নতি ঘটালে ও মানুষের দুর্দশা কমাতে পারলে তা নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করতেই পারে, বিবেচিত হতেই পারে। বলা বাহুল্য, এখন গড় গড় করে ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র তথা পররাষ্ট্র দফতর যা বলেছেন, তা অতীতে বিশেষভাবে বিগত আওয়ামী শাসনামলে কখনো শোনা যায়নি। বরং দেশটির পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, বাংলাদেশকে পানি দেয়া সম্ভব নয়। তখন রীতিমতো ফাইজলামি করে ভারতের কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা বলেছেন, আমরা কী করবো মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পানি না দিলে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এখন কীভাবে মমতাকে জিজ্ঞেস না করেই পানি সংক্রান্ত নতুন মেকানিজম নিয়ে বাংলাদেশের সাথে আলোচনায় রাজী হলেন? এছাড়া আরেকটি বিষয়, মুখপাত্র বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে স্বীকৃত কিছু ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা আছে। কথাটি মোটেই সত্য নয়। শুধু গঙ্গার ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে পানি বণ্টনের চুক্তি রয়েছে, যদিও ভারত চুক্তি অনুযায়ী পানি দিচ্ছে না বহু বছর ধরে। বাকী ৫৩টি অভিন্ন নদীর পানি বন্টন নিয়ে বাংলাদেশ বার বার আবেদন-নিবেদন ও অনুরোধ জানালেও ভারত এ ব্যাপারে কোন চুক্তি করতে রাজী হয়নি কিংবা বাংলা দেশকে পাত্তা দেয়নি। এছাড়া তারা বলেছে, তারা বাংলাদেশকে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করে। কিন্তু সম্প্রতি ত্রিপুরার ডম্বরু বাঁধটি দীর্ঘ তিন দশক পর খুলে দিলেও আগেভাবে তারা বাংলাদেশকে সতর্ক করেনি।
বলা বাহুল্য, মিথ্যা প্রচারণায় ভারত বিশে^র একটি শীর্ষ দেশ, একথা সবাই জানেন। এক্ষেত্রেও তারা অনেক সত্য গোপন করছে, মিথাচার করেছে। বর্তমানে ড. ইউনুসের ইশারায় বিশ^বিখ্যাত সংবাদ মাধ্যমে সিএনএস যখন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে রিপোর্ট করলো এবং বিশ^ব্যাপী তা প্রচার করলো, তখন ভারতের জঘন্য চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তারা বাংলাদেশের এই বন্যার নেপথ্যে ভারতের ‘পানি অস্ত্র’ ব্যবহারের অভিযোগ করেছে। এমনকি জাতিসংঘ বাংলাদেশের এই স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার জন্য ভারত থেকে নেমে আসা পানিকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে। এসবই ভারতের স্বৈরাচারী দুরাচারী ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ভারত বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা না দিলেও অচিরেই ড. ইউনুস যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাবেন, আন্তর্জাতিক আদালতে নালিশ করবেন, তা বুঝতে পেরেছে ভারত। তাই উপায়ন্তর না দেখে এখন সাধু সাজার উদ্দেশ্যে এসব বক্তব্য রাখছে ভারতের পররাষ্ট্র দফতর। এটা তাদের কূটকৌশল হতে পারে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখার জন্য, বাংলাদেশ যাতে আন্তর্জাতিক আদালতে না যায় সেজন্য। যা-ই হোক অভিন্ন নদীর পানিতে বাংলাদেশের হিস্যা বা দাবি নিয়ে বাংলাদেশের নতুন সরকার যখন সোচ্চার হয়েছেন এবং ভারত ও এর পরিণতি ও গুরুত্ব টের পাচ্ছে, তখন বিষয়টি একটি ইতিবাচক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে যাবে, এমন প্রত্যাশা এদেশের দীর্ঘকালের পানি বঞ্চিত কোটি কোটি মানুষের। দেখা যাক, কী ঘটে শেষ পর্যন্ত। শক্তের ভক্ত নরমের যম ভারত কী করে শেষ অবধি।