অবৈধ অস্ত্র বড়ো হুমকি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:২২ অপরাহ্ন
গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘সিলেটের অস্ত্রধারীরা কোথায়? যৌথ বাহিনীর এ্যাকশন শুরু’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যপূর্ণ এই বিস্তারিত প্রতিবেদনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও ক্যাডারদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ১৫ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে পিস্তল, শর্ট গান, কাটা রাইফেল থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সন্ত্রাসীরা ভয়ঙ্কর স্নাইপার রাইফেলও ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে যে, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের তথ্য থাকলেও প্রাণঘাতী বুলেট ব্যবহারের কথা স্বীকার করেনি কেউ। অথচ ছাত্র আন্দোলনে সিলেট নগরীতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন শতাধিক ছাত্র-জনতা। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া প্রাণঘাতি অস্ত্রের গুলিতে আহত হয়ে এখনো কাতরাচ্ছেন অনেকেই।
অনেকের মতে, ছাত্র আন্দোলনে সিলেটে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত অনেক অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহৃত একটি হচ্ছে এমআর সিক্সটিন। অনেকের মতে, এটা ভয়ানক স্নাইপার রাইফেল, যা অতীতে কখনো ব্যবহার করতে দেখা যায়নি অস্ত্রধারী সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডারদের। এ ধরনের একটি অস্ত্র হাতে জনৈক মুখোশধারী সন্ত্রাসীর ছবি ছাপা হয়েছে গতকালের দৈনিক জালালাবাদে। এর আগেও আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ছবি ছাপা হতে দেখা গেছে। সচেতন মহলের মতে, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামলে সিলেটের রাজপথে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এমআরসিক্সটিন বা স্নাইপার রাইফেলের মতো ভয়ানক অস্ত্র কখনো ব্যবহার হয়নি, যা হয়েছে এবারের ছাত্র আন্দোলনকালে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পালিয়ে যাবার পর প্রায় এক মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো এসব অস্ত্রধারী গ্রেফতার হয়নি কিংবা এসব অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। লক্ষণীয় যে, গত বুধবার থেকে সারা দেশের মতো সিলেটেও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে নামছে যৌথবাহিনী। গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘পুলিশের ২ হাজার অস্ত্র ও ৩ লাখ গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখনো ২ হাজার ৬৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ লাখ ২০ হাজার ৬৬০টি গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। এই লুট হওয়া অস্ত্রসহ তিন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে গত মঙ্গলবার রাত থেকে অভিযান শুরু করেছে যৌথবাহিনী।
পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট দেশের থানা, ফাঁড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা। এ সময় কিছু দুস্কৃতকারী পুলিশের ৫ হাজার ৮২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৪২ গুলি লুট করে। এর মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ৭৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ লাখ ৮৬ হাজার ৮২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। সেই হিসেবে ২ হাজার ৬৬ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ লাখ ২০ হাজার ৬৬০টি গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি।
আরো বলা হয়েছে, তিন ধরনের অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে যৌথ বাহিনী। সেগুলো হলো, থানা থেকে লুট হওয়া পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র, লাইসেন্স স্থগিত করার পরেও যারা অস্ত্র জমা দেয়নি তাদের আগ্নেয়াস্ত্র এবং অবৈধ অস্ত্র।
বলা বাহুল্য, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার বিগত ১৬ বছরে সরকার বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন দমনে দলীয় ক্যাডারদের বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করে এবং অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ ও দখলে রাখতে তাদের কোন আইনী বাধা প্রতিবন্ধকতা রাখেনি। ফলে বিভিন্ন সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় এসব অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের পুলিশের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এতে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনরত লোকজন যতো হতাহত হয়েছে, সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের গুলিতে এর চেয়ে কম হতাহত হয়নি, এমন অভিমত সচেতন মহলের। তাই এসব অস্ত্র উদ্ধারে জোরদার ও সফল অভিযান প্রয়োজন। অন্যথায় এদেশের শান্তি শৃঙ্খলার পাশাপাশি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে থেকে যাবে।