শুভবুদ্ধির উদয় হোক ভারতের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:১৫ অপরাহ্ন
ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সম্প্রতি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এমন কিছু বক্তব্য রেখেছেন যা বাংলাদেশের সচেতন মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তিনি তার দেশের সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়েছেন। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রাজনাথ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের রাশিয়া-ইউক্রেন ও হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ থেকে তাদের শিক্ষা নিতে আহবান জানিয়ে বলেছেন, এমন ঘটনা বিশ্লেষন করুন, ভবিষ্যতে ভারত কী ধরণের সমস্যায় পড়তে পারে, সেটি নিরুপনের চেষ্টা করুন এবং অপ্রত্যাশিত যে কোন কিছু মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকুন। তিনি আরো বলেন, ভারত-চীন সীমান্তে ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে যা হচ্ছে সেটি এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। রাজনাথ দাবি করেন, ভারত একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। আর এই শান্তি বজায় রাখতে তাদের সেনাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপরোক্ত বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেশটির শাসক গোষ্ঠীর এক বিশৃংখল এবং আগ্রাসী মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় পাওয়া যায়। দেশটির কট্টর সাম্প্রদায়িক শাসক দল বিজেপি ও তাদের সরকার যখন একের পর এক আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন এবং এতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তখন এসবের দায়ভার সেনাবাহিনীর ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। সেনাবাহিনীকে এসব মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলছেন। ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী যে রুশ-ইউক্রেইন এবং হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা বলছেন, সেসব যুদ্ধে তার সরকার নিপীড়িত ও মজলুম জনগোষ্ঠীর পক্ষে না দাঁড়িয়ে আগ্রাসী আক্রমণকারীদের সমর্থন ও সহযোগিতা করছে। তাই এখান ভালো কোন শিক্ষা নেয়ার সুযোগ নেই তার সেনাবাহিনীর। তার সরকার যদি ফিলিস্তিন কিংবা ইউক্রেইনের আক্রান্ত ও আগ্রাসনের শিকার জনগণের পক্ষে দাঁড়াতো তবে সেটা তার সেনাবাহিনীর একটি অনুসরণীয় শিক্ষার বিষয় হতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ভারত সবসময়ই নিপীড়ক ইসরাইল ও রাশিয়াকে সমর্থন এমনকি সহযোগিতা করে আসছে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশী করার জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেইনে গেলেও রাশিয়ার সাথে তাদের সখ্যতা ও সমর্থনে যে ভাটা পড়বে না, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আর ভারত তো ইসরাইলকে ফিলিস্তিনীদের গণহত্যামূলক যুদ্ধে প্রায় প্রকাশ্যেই সমর্থন ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে যে পরিবর্তিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং যে ভারত বিরোধী জনমত গড়ে ওঠেছে এজন্য শতভাগ দায়ী খোদ ভারতই। কারণ ভারত গত ১৬ বছর যাবৎ এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে খুনী স্বৈরাচারী ও লুটেরা হাসিনা সরকারকে সমর্থন ও সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের আঠারো কোটি জনগণ এখন ভারতের বিরুদ্ধে। সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস ও প্রায় দেউলিয়া করে দেশটিকে এক প্রকার ধ্বংস করার পেছনে দায়ী এই ভারত সরকার। তাই বাংলাদেশীদের এই ভারত বিরোধী মনোভাবের মোকাবেলায় সেনাবাহিনীকে নির্দেশ প্রদান বিপজ্জনক ও ভয়াবহ উদ্যোগ। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সৃষ্ট সংকট ও সমস্যা সামরিকভাবে মোকাবেলার চিন্তাভাবনাও পাগলামীর নামান্তর।
রাজনাথের দাবি, ভারত একটি শান্তিকামী দেশ। কিন্তু বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারত সরকারের আচরণের মধ্যে তার প্রমাণ বা নিদর্শন মিলে না। কারণ তার প্রতিটি প্রতিবেশী দেশ তাদের উপর ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ। এমনকি হিন্দুরাষ্ট্র নেপালের হিন্দুরাও ভারতকে পছন্দ করে না তাদের আগ্রাসী চরিত্রের জন্য।
বাংলাদেশের সাথে ভারতের বহু অমীমাংসিত সমস্যা বিদ্যমান। এগুলোর মধ্যে অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা ও সীমান্ত হত্যা অন্যতম। অতি সম্প্রতি ভারত তাদের সীমান্তে নদীর বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করেছে। দিন তিনেক আগে সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশী শিশু হত্যা করেছে। তাই ভারতের শাসক দল রাজনৈতিকভাবে যেসব সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং সমস্যাগুলোকে দীর্ঘায়িত ও জটিল করছে, সেগুলোকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পন্থায়ই সমাধান করতে হবে, সামরিক পন্থায় নয়। বাংলাদেশের জনগণ এ বিষয়ে ভারতের শাসক গোষ্ঠীর বোধোদয় ও সুমতি প্রত্যাশা করে।