প্রসঙ্গ : আওয়ামী লীগ ছাড়ছেন অনেক নেতাকর্মী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘রাজনীতি ছাড়তে চান আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে সদ্য ক্ষমতচ্যুত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নাম পরিচয় গোপন রাখা বেশ কয়েক জন নেতাকর্মীর বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, যাদের অনেকে রাজনীতি ছাড়তে চান বলে জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দলটি এখন নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শীর্ষ নেতারাও অনেক দেশ ছেড়েছেন। আবার কেউ কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টাকালে গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া নেতাদের মধ্যে এখনো যারা দেশে অবস্থান করছেন, তাদের প্রায় সবাই আত্মগোপনে আছেন। বর্তমানে নেতৃত্বশূন্য থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চরম হতাশায় ভুগছেন। তাদের অনেকেই এখন উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। সংবাদ মাধ্যমে কথা বলার সময় তারা তাদের নামও প্রকাশ করতে চাননি। আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের জনৈক নেতা বলেন, আমাদের দলের এখন দিশেহারা বিপর্যস্ত অবস্থা। কারণ একমাস হয়ে গেলো অথচ কেন্দ্র থেকে কার্যকর কোন নির্দেশনা দেওয়া হলো না। ফোন দিলেও কেউ ধরে না। হামলা-মামলা সব মিলিয়ে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের অনেকে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছেন।
লক্ষণীয় যে, গত ২৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শেখ হাসিনা পালায় না। অথচ এ ঘটনার ঠিক ১০ দিন পরে লাখ লাখ বিক্ষুব্ধ মানুষ রাজপথে মেনে আসার পর গত ৫ আগস্ট দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান, যা এখনো মানতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের জনৈক নেতা বলেন, আমি এখনো বিশ^াস করতে পারি না, আপা পালাইছে, মানতেই কষ্ট হয়। পালিয়ে ঢাকায় আশ্রয় নেয়া আওয়ামী লীগের একজন কর্মী বলেন, আমরা নিজেরা তো পালিয়ে বেড়াচ্ছি কাজ কাম করবো কী করে। তিনি আরো জানান, সংসার চালাতে না পেরে তার স্ত্রী প্রায়ই ফোন করে কান্নাকাটি করে। ফরিদপুরের এই আওয়ামী লীগ কর্মী আরো বলেন, এভাবে কতোদিন থাকবো? ভাবতে গেলেই কান্না আসে। মনে হচ্ছে, রাজনীতি করা পাপ হয়েছে। তাই আর রাজনীতি করবো না বলে সিদ্ধান্ত নিছি।
প্রবাদ আছে, ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’ কিংবা ‘টিলটি মারলে পাটকেল খেতে হয়’ অথবা ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে উপরোক্ত সবক’টি প্রবাদ বাস্তব সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির নামে গত ১৬ বছরে এদেশের বুকে এমন সব অপকর্ম করেছেন, যার জন্য তার একাধিকার বার ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মতো গুরুদন্ড হওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। অপরাধ ও আইন বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সবাই একমত। এ অবস্থায় শেখ হাসিনা নিজ দলের হাল ধরবেন না মামলার বিচার ও সাজা মোকাবেলা করবেন, তা তার পক্ষে এ মুহূর্তে চিন্তা করাও অসম্ভব। ফলে আওয়ামী লীগ এখন অকূল মহাসাগরে ভাসমান কান্ডারীহীন নৌকার মতো।
জঘন্য খুনি স্বৈরাচারী হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নামক দলটি গত প্রায় ১৬ বছর এদেশের বুকে যে খুন-গুম-সন্ত্রাস ও ধ্বংসলীলা চালিয়েছে, আয়না ঘরের মতো টর্চার সেলগুলোতে যে অমানবিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে, সেই অভিশাপে ধ্বংস হতে চলেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এই প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, অদূর এমনকি সুদূর ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগের পক্ষে এদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসা সম্ভব না-ও হতে পারে। এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে দুঃসহ পরিস্থিতিতে পড়েছেন, গত ১৬ বছর একই অবস্থা ও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বিএনপি ও জামায়ত নেতাকর্মীদের। আর সেটাই এখন পাটকেল কিংবা প্রতিক্রিয়া হয়ে ফিরে এসেছে এক সময়ের দাপুটে অহংকারী দল বর্তমানে গণধিকৃত আওয়ামী লীগের প্রতি।
বর্তমান নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী নেতাকর্মীদের সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ কোন কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পাবে না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তাদের এই সিদ্ধান্ত এদেশে আওয়ামী রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক বলে অনেক বিশ্লেষকের অভিমত। তবে যেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি এবং দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়নি, তাই দলের অনেক নেতাকর্মী আবারো দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর বা সক্রিয় হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।