অপরাজনীতি বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে গোপালগঞ্জে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এবার সড়কে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে শিশু শিক্ষার্থীরা। এই বিক্ষোভে অংশ নেয় গোপালগঞ্জ শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী। এ সময় তারা শ্লোগান দেয় ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা পরে সবাই একসঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। গত সোমবার তারা শহরের সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে জড়ো হতে থাকে। এরপর তারা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে লঞ্চঘাটে জমায়েত হয়। পরে সেখানে তারা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানায় ও একসঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে। পরে তারা নিজ নিজ স্কুলে চলে যায়।
উপরোক্ত ঘটনাটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা মনে হলেও এ নিয়ে কিছু চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে মনে করেন সচেতন মহল। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সমর্থক অধ্যুষিত গোপালগঞ্জের লোকজন স্বৈরাচারী হাসিনার প্রায় ১৬ বছরে শাসনামলে সরকারী চাকুরী ও ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক সুযোগ সুবিধা ও অগ্রাধিকার পেয়েছেন। শেখ মুজিবের জন্মস্থান ও সমাধিস্থল হওয়ার কারণে অজস্র সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন এই অঞ্চলের মানুষ। আর এমন কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই গোপালগঞ্জের মানুষ সবসময়ই ছিলো ক্ষমতাসীন দলের অনুরক্ত। ফলে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরেও গোপালগঞ্জের একশ্রেণীর মানুষকে আওয়ামী পক্ষে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। দেখা গেছে সেনাবাহিনীর গায়ে হাত তুলতে এবং তাদের গাড়ি পুড়িয়ে দিতে। কিন্তু এ ব্যাপারে দেশের জনগণের ক্ষোভ ও সেনাবাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের ফলে পরে তাদের গুটিয়ে যেতে দেখা যায়। এমনকি আওয়ামী লীগকে এজন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে গা বাঁচাতে হয়।
সেনাবাহিনীর উপর হামলাকারীদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় নতুন করে এই স্বৈরাচারের দোসর ও সুবিধাভোগী শ্রেণীকে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে দেখা যাচ্ছে। এজন্য তারা বেছে নিয়েছে স্কুলের শিশুদের। বড়োদের ইন্ধনে যে গোপালগঞ্জের স্কুল শিক্ষার্থীরা গত সোমবার বিক্ষোভ মিছিলে নামে, এতে কোন সন্দেহ নেই। এসব শিশুদের বেশীর ভাগই আওয়ামী সমর্থক পরিবারের ছেলে মেয়ে বলে জানা গেছে। পরিবারের অভিভাবকদের অনুপ্রেরণাই তারা দেশের এই অস্থির ও উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে রাস্তায় নামার দুঃসাহস দেখিয়েছে, যখন দেশের সবচেয়ে নিন্দিত ও ঘৃণিত দলের অধিকাংশ মন্ত্রী এমপি নেতানেত্রী ও কর্মী জনরোষ থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন। যখন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সবচেয়ে ধিকৃত। গোপালগঞ্জের এই স্কুল শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি জানিয়ে শ্লোগান দিয়েছে। কিন্তু এসব শিশু শিক্ষার্থীরা এ ধরনের দাবির পরিণতি কী তারা জানে না। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার অধিকাংশ হত্যা মামলা। তিনি দেশে ফিরলে তাকে নিশ্চিতভাবেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং একাধিক ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে তার। কিন্তু শিশু শিক্ষার্থীরা এসবের কিছুই হয়তো জানে না বা বুঝতে পারেনি। তাদেরকে রাস্তায় নেমে মিছিল বিক্ষোভ করতে বলা হয়েছে। কিছু শ্লোগান শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে শ্লোগান রয়েছে। জাতীয় সংগীত গেয়েছে তারা। এটা গাইতেই পারে। দেশে যখন একের পর এক আওয়ামী সরকারের খুন গুম নিপীড়ন নির্যাতন ও দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে এবং এসব দেখেও শুনে মানুষ ক্ষুব্ধ হচ্ছেন, শিউরে ওঠছেন, তখন আওয়ামী লীগের সমর্থনে এভাবে স্কুল শিশুদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে দলটির নেত্রী ও দলের পক্ষে মিছিল ও শ্লোগান দেয়ার আয়োজন যেমন আত্মঘাতী, তেমনি এসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। কোমলমতি শিশুদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজে ব্যবহার কিংবা ঢাল হিসেবে ব্যবহার রীতিমতো অপরাজনীতি ও গর্হিত অপরাধ, যখন তাদেরই মতো হাজার শিশু পুলিশের গুলিতে অন্ধ কিংবা আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্র খুনী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে। বিষয়টি গুরুতর বলে মনে করি আমরা। দেশের প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বিভিন্ন খাতের সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অস্থিরতা ও উত্তেজনা সৃষ্টির লক্ষ্যে গোপালগঞ্জের মতো আওয়ামী প্রভাবিত ও অধ্যুষিত এলাকায় স্কুল শিশুদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার আইনের দৃষ্টিতেও অপরাধ। আমরা এদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের দায়িত্বশীল মহলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।