সোনালী ভবিষ্যত গঠনে সুশাসন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৪১:১০ অপরাহ্ন
প্রায়োরিটি অর্থাৎ অগ্রাধিকারের বিবেচনায় অর্থনীতি সবকিছুর উর্ধে। অন্ততঃ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিগত হাসিনা সরকারের শাসনামলে বিপর্যস্ত ও ধ্বংসের সম্মুখীন অর্থনীতির বিবেচনায় এটাই সত্য। বাংলাদেশের জনগণের চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়টি হচ্ছে, তাদেকে গত দেড় দশকেরও বেশী সময় একটি দুর্বৃত্ত লুটেরা শাসকগোষ্ঠীর আর্থিক শোষনের শিকার হতে হয়েছে। আর সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, স্বৈরশাসন উৎখাতে পর এখন বাংলাদেশ পেয়েছে বিশ্বের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ নোবেলজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান জাদরেল অর্থনীতিবিদ। তাদের গভীর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিশ্বের যে কোন দেশের অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলে দিতে সক্ষম। বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণরের দক্ষতা ও যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তুপ থেকে জেগে ওঠতে শুরু করেছে। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘টার্গেট রপ্তানি ও রেমিট্যান্স’ শিরোনামে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে ও অর্থনৈতিক অবস্থা সুদৃঢ় করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এডিবি, জাপান আন্তর্জাতিক কো-অপারেশন এজেন্সী ইত্যাদি সব উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকসহ এসব সংস্থা ও দেশ সহায়তা বৃদ্ধির ঘোষণাও দিয়েছে। এতে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। সামনের দিনগুলোতে যে কোন মূল্যে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যোগ্যতম ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব কর্মকান্ডের সঙ্গে বিভিন্ন সময় দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। চড়া কিস্তির বিদেশী ঋণ পরিশোধ ও ডলারের সামগ্রিক চাহিদা মিটিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে ডলারের খোঁজে নেমেছে সরকার। সূত্রটি আরো জানায়, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠতে আরো এক বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করেছে এডিবি। এরই মধ্যে ৪শ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা প্রদানের কথা জানিয়েছে এডিবি। আশা করা যাচ্ছে, বাকি ৬শ মিলিয়ন ডলার আসবে এআইআইবি ও জাইকা থেকে।
এছাড়া বাজেট সহায়তা হিসেবে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে আরো এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত বছরের জানুয়ারীতে বাংলাদেশের সাথে চলমান ঋণ প্রকল্প ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের বাইরে আরো ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য আইএমএফের একটি মিশন আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসছে।
বলা বাহুল্য, শেখ হাসিনা জনগণের কাঁধে রেখে গেছে ৮ লাখ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ, যা পরিশোধে চাপের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ডলারের এই সংকট কাটানো সহজ নয়। তা সত্বেও ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার এক মাসের মাথায় সংকট কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। ব্যাংক খাতে সংস্কার শুরু হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ডঃ সালেহ উদ্দীন আহমেদ বলেছেন, আমরা অর্থনীতিকে একটা শৃংখলার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি।
এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। এ মাসের প্রথম ৭ দিনের মধ্যেই এসেছে ৫৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭ হাজার ১৪ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে আসছে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।
সব মিলিয়ে একথা বলা যায়, সুশাসনই সকল উন্নয়নের চাবিকাঠি। আর বিগত বছরগুলোতে এটারই অভাব ছিলো সবচেয়ে বেশী। সুশাসনের প্রয়োজন সৎ, দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ মানুষ। লালন শাহ তার এক সংগীতে বলেছিলেন, মানুষ ভজলে হবি সোনার মানুষ। আমাদেরও তাই সোনার মানুষদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। তবেই হবে সোনার দেশ। দেশ সোনার মানুষ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে কাংখিত উন্নয়নের লক্ষ্যে।