বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩২:৪৭ অপরাহ্ন
গতকাল একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘ব্যাপক পরিবর্তন আসছে পরীক্ষা ও পাঠ্য বইয়ে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১২ সালের সৃজনশীল কারিকুলামে ফিরছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৭ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এই কারিকুলামের পাঠ্যবই দেওয়া হবে। আর প্রাথমিকের ৩ শ্রেণীর বই থাকবে চলতি শিক্ষাবর্ষের নতুন শিক্ষাক্রমের আদলে।
বলা বাহুল্য, বিগত হাসিনা সরকারের শেষদিকে চালু করা নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন অভিভাবক মহল। তাই এই কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রমে পর্যালোচনা শেষে অভিভাবকদের দাবির প্রেক্ষাপটে এটা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছেন বর্তমান সরকার।
জানা গেছে, চলতি বছর নতুন কারিকুলামে বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের পরিবর্তে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকবে ৩০ নম্বরের। আর মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ৩ ঘণ্টার বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। এতে ৭০ নম্বরের প্রশ্নপত্র থাকবে। বাকি ৩০ নম্বর দেওয়া হবে শিখনকালীন মূল্যায়নের ভিত্তিতে। নতুন কারিকুলামের বইয়ের ওপর এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের ২০১২ সালের সৃজনশীল কারিকুলামের পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন ও সংশোধন করা হচ্ছে। অনেক পরিচ্ছেদ বাদ পড়ছে। আবার অনেক কিছু সংযোজন হচ্ছে। এতে বইয়ের ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। এছাড়া নবম শ্রেণীতে বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা) বিভাজন আলোকে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই তৈরী করা হচ্ছে। তবে প্রথম থেকে ৩য় শ্রেণী পাঠ্যবইয়ে তেমন কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।
গত ২৪ জানুয়ারী অর্থাৎ স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের অর্ধবছর আগে একটি জাতীয় মিডিয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, সব বিদ্যালয়ে এখনো বই পৌঁছায়নি, ইতোমধ্যে পাঠ্যবইয়ে একের পর এক ভুল বের হতে শুরু করেছে। কিছু কিছু ভুল মারাত্মক ও রীতিমতো অপরাধের শামিল। ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাঠ্যবই ছাপানোয় উদ্বিগ্ন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া ইউরোপ তথা ফিনল্যান্ডের মতো অত্যাধুনিক ইউরোপীয় দেশের শিক্ষাঙ্গনের অনুসরণে অনগ্রসর বাংলাদেশের শিক্ষাক্রম সাজানোর বিষয়টি তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয় এদেশে। এ ধরনের পাঠ্যক্রম পড়ানোর মতো প্রশিক্ষিত ও যোগ্য শিক্ষক না থাকলেও এ ধরনের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয় এদেশের শিক্ষার্থী ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। এছাড়া দলীয় মতাদর্শ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের গেলানোর প্রচেষ্টাও ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। সব মিলিয়ে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও চক্রান্ত লক্ষ্য করা যায় বিগত সরকারের আমলে। এর পেছনে বাইরের শক্তিরও প্রভাব ও ইন্ধন ছিলো বলে সচেতন মহলের দাবি।
যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে দেশ ও জাতি বিশেষভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার অতীতের চক্রজাল দুরীভূত করে এদেশের উপযোগী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা উপহার দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যাতে শিক্ষার্থীরা আগামী দিনের শিক্ষিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তাদের এই মহতী উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কাম্য।