দেশে হবে স্থায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:৩৩ অপরাহ্ন
পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা থাকার পরও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ভ্রান্ত নীতি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে ৭০ কোটি টাকায় গ্যাস পাইপলাইন ও ৫৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কূপ খননের প্রকল্প রয়েছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি।
সম্প্রতি জাতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত ‘আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদ ঃ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে মিলেমিশে লুটপাট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে মিলেমিশে মহালুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। শেষ মুহূর্তে সোলার খাতে ২৭টি বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিলেও সেগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে যেতে পারেনি বিগত সরকার। একই সঙ্গে অনুমোদন দেয়া সম্ভব হয়নি আরো ৫টি উচ্চ জ্বালানীর রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর প্রকল্প। সংশ্লিষ্টদের মতে, এত বছর সরকারী-বেসরকারী খাতের লোকজন মিলেমিশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে লুটপাট করেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও কয়েকটি রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত ছিলো। প্রকল্পগুলোর অধিকাংশের মালিকানার সঙ্গে বিগত ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারাই মূলত উদ্যোগটি নিয়েছিলো। কিন্তু সে সুযোগ তারা পায়নি গণঅভ্যুত্থানের কারণে।
বলা বাহুল্য, গত সাড়ে ১৫ বছরে কোন দরপত্র ছাড়াই বেসরকারী খাতে শতাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই কোন কাজে আসেনি। সরকারি হিসাবে উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হলেও লোডশেডিং থেকে রেহাই মিলেনি। সবার কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না করে শুধু সংযোগ দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়নের কৃতিত্ব জাহির করে হাসিনা সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগ এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত হিসাবে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটপাট হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই শুধু সক্ষমতা দেখিয়ে এই বিপুল অর্থ নিয়ে গেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। এসব কেন্দ্রের বেশীর ভাগের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
এক সময়ে বলা হতো, বাংলাদেশ তেল গ্যাসের উপর ভাসছে। অর্থাৎ জ্বালানী তেল ও গ্যাসের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এদেশে। এগুলো উত্তোলনের ব্যবস্থা করা গেলে বিদেশ থেকে জ্বালানী আমদানি করতে হবে না। কিন্তু শেখ হাসিনার দুর্নীতিবাজ সরকার তা না করে সহজে অর্থ লুটপাটের জন্য দেশের বাইরে থেকে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা করে। এজন্য স্থাপন করা হয় শতাধিক কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। একদিকে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি ক্রয় অপরদিকে এলএনজি আমদানিতে লুটপাটের মচ্ছব চলে গত ১৫ বছর ধরে। এই জ্বালানী খাতে দুর্নীতি করে হাসিনা সরকারের জনৈক মন্ত্রীর ভাই সিঙ্গাপুরের অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এ নিয়ে এখন তদন্ত শুরু হয়েছে। বলা বাহুল্য, ঐসব ব্যক্তির নেপথ্যে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের লোকজনই লুটপাটকৃত এই বিপুল অর্থের মালিক, এমন অভিমত সচেতন মহলের।
যা-ই হোক, বর্তমানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের এই সাগরচুরি ও মহালুটপাটের ইতি ঘটতে চলেছে। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানী উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে চলমান লোডশেডিং ও গ্যাস সংকটের বিষয়টি শীতের আগেই সমাধান হয়ে যাবে। গ্যাস ও বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বিল পরিশোধে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংকের কাছে এক বিলিয়ন এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছে এক বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে। ভোলায় গ্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে জায়গাটা সম্ভাবনাময়, সেখানে ১০০টি কূপ খনন করা হবে। এখানে যদি প্রত্যাশা মতো গ্যাস পাওয়া যায়, তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিএনজি করে আনা এবং ব্রিজ করা-এ দুটি নিয়ে ভাবছে সরকার।
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে মহালুটপাটের দিন শেষ হয়ে এসেছে। এখন নিজ ভূখন্ডের তেল, গ্যাস ও কয়লায় চলবে এদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। এতে সাশ্রয় হবে হাজার হাজার কোটি টাকা। দেশে গড়ে ওঠবে একটি স্থায়ী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এর ফলে দূর হবে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ ঘাটতির বিষয়টি চিরতরে।