লড়াইয়ে সকল কৌশলই বৈধ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫:৩০ অপরাহ্ন
গতকাল দৈনিক যুগান্তরে ‘ঢাবিতে ছাত্রশিবিরের আত্মপ্রকাশ নিয়ে যা বললো ছাত্রদল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে এসেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের শাখার সভাপতি ও সেক্রেটারী। তাদের পরিচয় প্রকাশ্যে আসার পর জনমনে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। তবে এ বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। গত সোমবার এক গণমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আত্মপ্রকাশকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি এবং তাদের স্বাগত জানাই। তবে একজন একজন করে নয়, সকলের পরিচয় প্রকাশ করা উচিত। তিনি আরো বলেন, গোপন তৎপরতার মাধ্যমে কখনো জনসম্পৃক্ততার রাজনীতি সম্ভব নয়।
তার একথাটি শতভাগ সত্য, তবে একটি রাষ্ট্রে যখন কোন একটি বিশেষ দলের গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার ন্যূনতম সুযোগ থাকে না এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে রাজনীতি করতে হয়, তখন তাদের পক্ষে নিজেদের দলীয় পরিচয় গোপন করে কাজ করে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। ঢাবি শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারীকে এমন পরিস্থিতিতে গোপনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হয়েছে। বলা যায়, সরকার, সরকারী দল ও তাদের ছাত্র সংগঠন তাদেরকে বাধ্য করেছিলো এমনটি করতে।
এদেশের প্রতিটি মানুষ মাত্রেই জানেন, গত দেড় দশকে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিটি নেতাকর্মীর সাথে কী ধরনের আচরণ করেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সরকার। তাদের সাথে যে নিষ্ঠুর নির্মম আচরণ করা হয়েছে তা উপমহাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলা চলে। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের সাথে যে কোন অন্যায় অবিচার বেআইনী কর্মকান্ড ও আচরণকে বৈধতা দিয়েছিলো ফ্যাসিস্ট নেত্রী হাসিনা ও তার দল এবং তাদের সরকার। শিবিরের কোন নেতাকর্মীকে তারা মানুষ বলেই গণ্য করেনি গত দেড় দশক। যদি গণ্য করতো তবে ‘একটা একটা শিবির ধর, ধরে ধরে জবাই কর’ এমন ধরনের চরম নৈরাজ্যকর ও সন্ত্রাসী শ্লোগান দিতো না তারা। শিবির পরিচয় পাওয়া মাত্রই তাকে পিটিয়ে বা দেখামাত্রই গুলি করে হত্যার নির্দেশ ছিলো আইন শৃংখলা বাহিনী ও ছাত্রলীগের প্রতি। এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামানের বেআইনী ও চরম নৈরাজ্যকর বক্তব্যের কথা সকল সচেতন মানুষের মনে থাকার কথা। তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন অফিসার হয়ে শিবিরের সাথে নিষ্ঠুর আচরণের জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রকাশ্যে নির্দেশ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে প্রকাশ্যে শতবার এমন নির্দেশ ও হুমকি দিতে দেখা গেছে গত দেড় দশকে। পরিস্থিতি যখন এমন তখন ভয়ে ছাত্রশিবির বা জামায়াতের মতো একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাজনীতি ছেড়ে দেবে কিংবা হাতপা গুটিয়ে বসে থাকবে, এটা কি প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক? নিশ্চয়ই না। তাই এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ঢাবি’র শিবির সভাপতি ও সেক্রেটারী রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছেন, যা মোটেই অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। বরং এটাই ছিলো কৌশলের দিক দিয়ে বিচক্ষণতার পরিচায়ক।
দেশ যখন ইতিহাসের জঘন্যতম ও দীর্ঘকালীন স্বৈরাচারের কবলে পড়ে ধ্বংসের মুখে, খুন-গুম ও নিপীড়ন নিত্যনৈমিত্তিক, তখন তার ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যুদ্ধ ও লড়াইয়ের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় আচরণ। এ সময় কে নিজেকে কোন পরিচয় দিলো, কোন ছদ্মবেশ ধারণ করলো কিংবা গুপ্তচরের ভূমিকায় কোন কৌশল অবলম্বন করলো, তার যৌক্তিকতা বিচার মোটেই বিবেচ্য বা আলোচনার বিষয় নয়। তখন একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, চরম অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মরণপন লড়াই। আর এ কাজটিই করেছে ছাত্র সমন্বয়কদের নেতৃত্বে গোটা দেশের ছাত্র-জনতা। তখন এই সমন্বয়কদের কে কোন রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের নেতা, কর্মী বা সমর্থক তা মোটেই বিবেচ্য বিষয় ছিলো না। থাকা উচিতও নয়। ঢাবির শিবির সভাপতি ও সেক্রেটারীও সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে জাতিকে স্বৈরাচারমুক্ত করার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। এতে দোষের বা সমালোচনার কিছু নেই। যারা এ নিয়ে সমালোচনা ও নেতিবাচক মন্তব্য করছেন, তা হয় অজ্ঞতাবশত; না হয় হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে এমনটি করেছেন।