আশায় আশায় জনগণ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৩৩ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘গ্যাস চুরির দায়ে মেরিগোল্ড সিএনজি পাম্পে সংযোগ বিচ্ছিন্ন’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল কালাপুর মেরিগোল্ড সিএনজি পাম্পে মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস চুরি করার ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করেছে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানী। গত রোববার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গত আগস্ট মাসে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানীর নিকট ভোক্তা পর্যায় থেকে উপজেলার দু’টি সিএনজি পাম্পের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়। গ্যাসের সাথে শতকরা ৪০ ভাগ বাতাস ভরে প্রতারণা করে আসছিলো সিএনজি পাম্প। এছাড়া সম্প্রতি রাজধানীতে নকল ব্যান্ডরোল দিয়ে সিগারেট বিক্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকির দায়ে জরিমানা করা হয়েছে একটি সিগারেট কোম্পানীকে। যানজট নিয়ন্ত্রণের নামে সড়কে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠেছে সিলেটের বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের সংস্কারাধীন সড়কে।
এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর প্রকাশিত হচ্ছে মিডিয়ায়। অবশ্য এসব খবরে এখন অ্যাকশন বা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে যা বিগত দেড় দশকে দেখা যায়নি। ভেজাল, জালিয়াতি ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ অপকর্ম বিগত বছরগুলোতে এতো বেশী বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে, এগুলো যে অন্যায় ও অপরাধ, সেটা মানুষ প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো। জাল বা নকল ব্যান্ডরোল দিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছিলো সিগারেট কোম্পানী। তাদের বিরুদ্ধে আগে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। আর সকল ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায়। পরিবহন থেকে শুরু করে ফুটপাতে ব্যবসা কিংবা যে কোন পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের জন্য চাঁদা প্রদান ছিলো বাধ্যতামূলক। আর এতে জড়িত ছিলো ক্ষমতাসীন দল বা তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ফলে প্রত্যেকটি পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে, সাধারণ মানুষকে তা বহন করতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের অর্থনীতিবিদরা এই চাঁদাবাজি বন্ধের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ফলে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে চাঁদাবাজির মতো জঘন্য অপরাধ এখন কমে এসেছে। চাঁদাবাজদের পেটাতেও দেখা গেছে সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকেও এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর বহুমুখী প্রতারণা এখনো অব্যাহত। ওজনে কম দেয়া এবং নি¤œমানের কিংবা ভেজাল পণ্য বিক্রি এবং মজুতদারির যে মচ্ছব চলছে গত কয়েক যুগ ধরে। এর অবসান প্রয়োজন। বর্তমান বিপ্লবী সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে। আগে এসব বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আর যা নেয়া হয়েছে তা ছিলো অনেকটাই লোক দেখানো।
ক্ষমতাসীনদের পরিচালিত ভেজাল পণ্যের কারখানা ও গোদামের ধারে কাছে না গিয়ে বাজারের দু’চারটে দোকানে গিয়ে ভেজাল ও মজুতদারির বিরুদ্ধে অভিযানের ঘটনা ঘটেছে প্রায়ই। এতে জনগণের বাহবা কুড়ানো কিংবা দায় সারা গেলেও এসব অপকর্ম ও অপরাধ বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি। অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে লোকবলের ঘাটতির অজুহাত দেয়া হয়েছে বছরের পর বছর। কিন্তু বিএসআই কিংবা ভোক্তা অধিকার দপ্তরকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে কার্যত কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি বিগত সময়ে। এখন ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও ছত্রছায়া না থাকায় এদিকে দৃষ্টি দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের এসব অন্যায় অপকর্মের অবসান হবে এবার।
একথা সত্য যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহনের পর দু’টি মাসও এখনও অতিক্রান্ত হয়নি। এতো অল্প সময়ে এতো সব জঞ্জাল পরিস্কার করা অসম্ভব। তবে এসব জাতীয় অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে ক্রমশঃ কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া নেয়া হবে, সেই প্রত্যাশা নিয়ে নতুন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন দেশের দীর্ঘকালের দুর্ভোগপীড়িত জনগণ। আমাদের প্রত্যাশা, আঠারো কোটি মানুষ হতাশ হবেন না প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।