ভুল নীতির পরিনতি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৫১ অপরাহ্ন
একটা দেশ বা জাতির ভুল নেতৃত্ব যে সেই দেশ কিংবা জাতিকে ধ্বংসের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, এর নজির বিশ্বে বিরল নয়। হিটলার ও মুসোলিনী থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা শাসকের সংখ্যা কম নয়। বর্তমান সময়ে ইসরাইল ও ভারতের শাসক গোষ্ঠীর কর্মকান্ড দৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা নিজেদের দেশকে সঠিক পথে চালানোর নামে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ দু’টি দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের গৃহীত নীতি দেশ দু’টির জনগণকে ইতোমধ্যে মস্ত বিপদ বা বিপাকে ফেলে দিয়েছে বলে অনেকের অভিমত।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, ইসরাইল প্রথমে গাজায় হামাস এবং বর্তমানে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংঘাতে জড়িত হয়ে নিজ দেশের জনগণের যতোটা কল্যাণ করছেন তার চেয়ে বহুগুণ বেশী সংকট সৃষ্টি করেছেন তাদের জন্য। আর এর প্রমাণ হচ্ছে, ইসরাইল জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ। দেশের অধিকাংশ মানুষ যুদ্ধ চায় না। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার চায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। অনেকেই জানেন, ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে নিজ দেশে। যুদ্ধ বন্ধ হলে কিংবা পদত্যাগ করলে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে তাকে। জেলে যেতে হবে। তাই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের জন্য। একইভাবে তার সরকার নেতামন্ত্রীরাও ক্ষমতায় থাকার লোভে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে তাদের পদত্যাগ করতে হতে পারে, এই শংকা তাদের মনে। এখানে দেশের স্বার্থ গৌন।
এভাবে যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় এমনকি বর্তমানে যুদ্ধ আরো সম্প্রসারিত হওয়ার ফলে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আনন্দে তালি বাজালেও গোটা দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের সম্মুখীন। দেশের লাখ লাখ মানুষ বাস্তচ্যুত এমনকি দেশত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরাইলের মতো ক্ষুদ্র ও স্বল্প সংখ্যক জনসংখ্যার দেশের বিরুদ্ধে যদি বছরব্যাপী যুদ্ধ সংঘাত চলে, তবে সে দেশের পক্ষে দীর্ঘকাল তা সহ্য করা সম্ভব নয়। গোটা বিশ্ব সহায়তা দিলেও সে দেশে সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এটা ইহুদী জাতিগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের জন্যও হুমকিস্বরূপ। কারণ বিশ্বের ইহুদীদের জনংখ্যার একটি বড় অংশ ইসরাইলে বাস করে।
এই সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী যদি নির্মূল বা বিপন্ন হয়ে যায়, তবে বিশ্বে ইহুদী জাতি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে যে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। গত এক বছরের গাজা যুদ্ধে ইসরাইল রাষ্ট্রের অর্থনৈতিকসহ সকল ক্ষেত্রে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, তা ইসরাইল কবে কাটিয়ে ওঠতে পারবে কিংবা আদৌ পারবে কি-না, এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে খোদ ইসরাইলী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মাঝে। তাদের মতে, হামাসের পাশাপাশি হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ইসরাইলের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলতে পারে। হিজবুল্লাহ নির্মূল করার নামে যে স্বপ্ন দেখছে ইসরাইল, তা বাস্তবায়িত হওয়া নিতান্তই দুরাশা। হামাসের চেয়ে হিজবুল্লাহ বহুগুণ বেশী শক্তিশালী। তারা হামাসকেও এখনো পরাজিত করতে পারেনি।
অপরদিকে ভুল নেতৃত্ব ও কূটনীতির কারণে এ অঞ্চলের বৃহৎ দেশ ভারতের অবস্থা এখন লেজে গোবরে। ভারতের আফগান নীতি চরমভাবে মার খাওয়ায় তাকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত মার খেতে হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এরপর মালদ্বীপ ও শ্রীলংকায় তাদের বৈদেশিক কূটনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে। নেপাল ও ভূটানেও একই অবস্থা। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে স্বৈরাচারী হাসিনার পতন তাদের কূটনৈতিক সক্ষমতার কফিনে শেষ পেরেক হয়ে দেখা দিয়েছে। এসবের পেছনে কট্টর হিন্দুত্ববাদী গুজরাটের কসাই হিসেবে পরিচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক মতাদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গী বিশেষভাবে দায়ী। তার ও দলের আগ্রাসী ও হস্তক্ষেপের নীতি প্রতিবেশী দেশগুলোকে ভারতের প্রতি ক্রুব্ধ ক্ষুব্ধ ও বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে। এভাবে মোদি ও তার দেশ হয়ে পড়েছেন প্রায় একঘরে। নিজের দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি তার বিদ্বেষমূলক আচরণ লক্ষ্য করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ভারত খন্ড বিখন্ড হওয়ার ব্যাপারে মোদিকে সতর্ক করে দেন বছর কয়েক আগে। এভাবে ইসরাইল ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় নিজেদের দেশ ও জনগণের জন্য চরম দুর্ভোগ এবং ভবিষ্যত শংকা ও অনিশ্চয়তা ডেকে আনছেন, তাদের একের পর এক সংকীর্ণ স্বার্থান্বেষী এবং দেশ বিরোধী নীতিমালা ও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে।