আর কতো অবহেলা পর্যটন শিল্পকে?
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৩৫ অপরাহ্ন
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে বদলে দেয়া যাবে পুরো সিলেট বিভাগকে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামানো যাবে সিলেটে। বিশেষভাবে ভারতের সেভেন সিস্টার্স থেকে প্রচুর পর্যটক টানা যাবে এখানে। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে স্থানীয় অর্থনীতিতে। সিলেট অঞ্চলের এক কোটির মতো মানুষের সৌভাগ্য এই যে, সৃষ্টিকর্তা অপার প্রাকৃতিক ঐশ^র্য ও সৌন্দর্য দান করেছেন এ অঞ্চলে। আর দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এটাকে মূল্যায়ন ও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। অবশ্য এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই কারণ, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে উদাসীন, নির্লিপ্ত। যে যখন ক্ষমতায় এসেছেন নিজেদের আখের গোছানো চেষ্টা করেছেন। দেশ ও জনগণের চিন্তা করেননি আন্তরিকভাবে।
দেখা গেছে, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলা একজন পর্যটন প্রতিমন্ত্রী পেলেও এই জেলার অপার পর্যটন সম্ভাবনাকে তিনি কাজে লাগাননি। অথচ চাইলে তিনি পর্যটনের উন্নয়ন করে গোটা জেলার চেহারা পাল্টে দিতে পারতেন। বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীসভা ও লুটপাটের সা¤্রাজ্যের অবসান ঘটেছে। নতুন সরকার এসেছে। জনগণের প্রত্যাশা বর্তমানে পর্যটনের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টাসহ দায়িত্বশীল সকল ব্যক্তি সিলেটের অপার সম্ভাবনাময় এই পর্যটন শিল্পের সমৃদ্ধির দিকে নজর দেবেন। তাঁরা সিলেট অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানগুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে বিপুল অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। বর্তমানে পট পরিবর্তনের ফলে আইন শৃঙ্খলা খাতে বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান। এ অবস্থায় অন্যান্য খাতের মতো পর্যটন খাতেও অনিয়ম-অপকর্মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিলেটের ভোলাগঞ্জসহ সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র থেকে সাদা পাথর লুটপাট ও চুরির খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। ট্রলিতে করে পাথর লুটপাটকারী সাদা পাথর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে সাদা পথর পর্যটন কেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণ সাদা পাথরই যদি চুরি ও লোপাট হয়ে যায়, তবে পর্যটকরা আর এখানে আসবেন কিসের আকর্ষণে? এমন প্রশ্ন এখন বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে। সাদা পাথরের মতো অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রেও এমন অনিয়ম ও অপকর্মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেক অরক্ষিত হয়ে পড়েছে এসব পর্যটন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থান।
বলা বাহুল্য, সিলেটের প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, জাফলং, লালাখাল, শ্রীপুর, উৎমাছড়া, বিছনাকান্দি, রাতারগুলো, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ও বিভিন্ন চা-বাগান। এছাড়া সিলেট বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোর মধ্যে শ্রীমঙ্গল, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি, মাধবকুন্ড, হামহাম, হাকালুকি, টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রিলেক, বারেকের টিলা, শিমুল বাগানসহ অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে যথাযথভাবে সাজানো গেলে প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র বৈদেশিক মুদ্রাআয়ের স্থায়ী উৎসে পরিণত হবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ পর্যটক ও দর্শনার্থী থেকেও প্রচুর অর্থ আয় করা সম্ভব হবে। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর অর্থনীতি হয়ে ওঠবে চাঙ্গা। বিকাশ ঘটবে পর্যটন সংশ্লিষ্ট শিল্প ও ব্যবস্থা বাণিজ্যের।
সত্যি বলতে কি, সরকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও রাজস্ব আয়ের জন্য প্রচলিত পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্সের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে আছে দীর্ঘকাল যাবৎ। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য ভিন্ন কোন পথ বা বৈচিত্র্যের অনুসন্ধান করেনি। কিন্তু অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত তার সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত তার ঐশ^র্য নিয়ে পায়ের কাছে পড়ে থাকলেও এটাকে কাজে লাগাতে দেখা যায়নি কোন সরকারকেই। বর্তমানে জনগণের অশেষ প্রত্যাশার নতুন সরকার যদি আগের সরকারগুলোর মতো পর্যটন শিল্প বা খাতের উন্নয়নকে অবহেলা করে, তবে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। পর্যটন সংশ্লিষ্ট মহলসহ দেশের সচেতন জনগণ অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি ও মনোযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।