সরকারকে সাধুবাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৫:০৮ অপরাহ্ন
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাইবার আইনে দায়ের হওয়া স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া এসব মামলায় কেউ গ্রেফতার থাকলে তিনিও আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি পাবেন।
জানা গেছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর অধীনে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট ৫৮১৮টি মামলা চলমান রয়েছে। মামলাসমূহের মধ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তমত প্রকাশের কারণে দায়ের হওয়া মামলাগুলোকে ‘স্পিচ অফেন্স’ এবং কম্পিউটার হ্যাকিং বা অন্য কোন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতিকে ‘কম্পিউটার অফেন্স’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বর্তমানে ‘স্পিচ অফেন্স’ সম্পর্কিত মোট ১৩৪০টি মামলা চলমান রয়েছে, যার মধ্যে ৪৬১টি মামলা তদন্তকারী সংস্থার নিকট তদন্তাধীন এবং ৮৭৯টি মামলা দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। ‘স্পিচ অফেন্স’ সম্পর্কিত মামলাগুলোর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে ৭৮৬টি এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২৭৫টি মামলা চলমান রয়েছে।
বর্তমান সরকার ‘স্পিচ অফেন্স’ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৩৪০টি স্পিচ অফেন্স সম্পর্কিত মামলার মধ্যে বিচারাধীন ৮৭৯টি মামলা আইন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে। তদন্তাধীন ৪৬১টি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হবে। এসব মামলায় কেউ গ্রেফতার থাকলে তিনি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি পাবেন। এর ফলে খ্যাতিমান সাংবাদিক ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও মুক্তি পাবেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন অচিরেই সংশোধন বা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে আইনটি পুরোপুরি বাতিল করা উচিত হবে না। কারণ এটি মূলতঃ দুই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে তৈরী করা হয়েছে। একটি হচ্ছে ‘কম্পিউটার অফেন্স’ (কম্পিউটার ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটন) এবং অন্যটি ‘স্পিচ অফেন্স’। ‘স্পিচ অফেন্স’ বাতিল করা সম্ভব হলেও ‘কম্পিউটার অফেন্স’ বাতিল করা সম্ভব হবে না।
বলা বাহুল্য, বিগত সরকারের আমলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তথা সাইবার আইনের বিভিন্ন ধারা ব্যবহার করে এদেশের জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করা হয়। ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন অপকর্মের সমালোচনাকে এই আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে হাজারো লোককে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। একই সাথে পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করা হয় এই আইনের দ্বারা। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মোশতাক আহমদের মতো লেখককে বন্দী করে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। শহীদুল ইসলামের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটো সাংবাদিক ও কিশোরের মতো খ্যাতিমান কার্টুনিস্টকে কারাভোগ করতে হয়েছে এই কুখ্যাত আইনের অধীনে।
স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। তাই বর্তমান সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ‘স্পিচ অফেন্স’ সংক্রান্ত আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সাইবার আইনের অন্যান্য অন্যায় ও ক্ষতিকর ধারাগুলো সংশোধন বা সংস্কারের কথাও বলেছেন। মিডিয়া জগতের জন্য এটা একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা বলে আমরা মনে করি। এজন্য সরকারকে সাধুবাদ।