চক্রান্তের জালে দেশের জুটমিল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০:৩৭ অপরাহ্ন

বিশ্বে যখন পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে তখন বাংলাদেশের জুটমিল বা পাটকলগুলো বন্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই জুটমিলগুলো ধ্বংসের পেছনে ভারতের ব্যবসায়িক চক্রান্ত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ। ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বৈরশাসক হাসিনার মন্ত্রী ও সচিবরা এদেশের পাটকলগুলোকে লোকসানের শিল্পে পরিণত করে শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘কেন মুখ থুবড়ে পড়েছিলো পাটকলগুলো?’ শিরোনামে সম্প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে লোকসানী খাত দেখিয়ে ২০২০ সালের ১ জুলাই বন্ধ করে দেয়া হয় বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশন-এর ২৫টি মিল। ফলে ৭০ হাজার দক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর এই মিলগুলোকে ধ্বংস করতে প্রতিবেশী ভারতের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চক্রান্ত কাজ করেছে। পরিচালনার জন্য এসব জুটমিলকে অদক্ষদের হাতে তুলে দেয়া হয় পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলতে থাকে। অতিরিক্ত বেতন কাঠামো তথা মাথাভারী প্রশাসন, রাজনৈতিক নিয়োগ, শ্রমিক ইউনিয়নের অপতৎপরতা এবং পাট কেনার ও বিপণনে দক্ষতার পরিচয় না দেয়ায় ধীরে ধীরে জুটমিলগুলো লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
এ অবস্থায় মিল পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধি কিংবা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয় তথা সরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই জুটমিলগুলো বন্ধের ম্যান্ডেট দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। পরিবেশবান্ধব পাটশিল্পকে ধ্বংস তথা পাটপণ্য নষ্ট করে প্লাষ্টিক পণ্যের উন্নয়নের জন্য কারসাজিতে যুক্ত হয় প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পের জনৈক উদ্যোক্তা তৎকালীন পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। এর সাথে যুক্ত ছিলেন তৎকালীন পাটসচিব। প্রতিবেশী দেশের পরামর্শে হাসিনা সরকার দেশের রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া তথা এদেশের পাটশিল্পকে ধ্বংস করে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের পর জুটমিলগুলোর সমস্যা দুরীকরণ ও সংস্কারের কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। লোকসানের জন্য বিজেএমসি’র চিহ্নিত করা কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী দায়ী হলো, সক্ষমতা অনুসারে উৎপাদন করতে না পারা। আর সক্ষমতা অনুসারে উৎপাদন হওয়ার নেপথ্যে ছিলো দীর্ঘদিনের পুরাতন মেশিনারিজ বিএমআরআই না করা, মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গুণগত মানসম্পন্ন পাটক্রয় নিশ্চিতকরণে ব্যর্থতা, দক্ষ স্পিনার ও তাঁতির অভাব, দক্ষ মিস্ত্রির অভাবে মেশিনসমূহের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া, শ্রমিকদের বেতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তোষ, গেট মিটিং ও ধর্মঘট। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কূটনৈতিক তৎপরতা দিয়ে ভারত যেভাবে পাটশিল্পকে নীতিসহায়তা ও ছাড় দেয়, সেভাবে দিতে বাংলাদেশের ব্যর্থতা।
ফলে দেশে ও বিদেশে ভারতের সাথে বাংলাদেশের পাটপণ্য অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়। আর এসবের পেছনে ভারতের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় আসার প্রতিদান দিতে গিয়ে স্বৈরশাসক হাসিনা সরকার দেশের পাটকল ও পাটশিল্পকে বলি দেয়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক বিশেষভাবে পলিথিন নিষিদ্ধকরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর পাশাপশি দেশের পাটশিল্পের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন। আশা করা যায়, সরকার দেশের বন্ধ জুটমিলগুলো পুনরায় চালুর ব্যবস্থা করবে এবং পাটশিল্প তথা পাটজাতপণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশে বিপুল কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেবে।




