আফগান চমক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০:৪৮ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘চমকে গেলো বিশ্ব : আফগানিস্তান তৈরী করলো পাবলিক বাস’ শিরোনামে একটি চমক সৃষ্টিকারী সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত একটি জাতি তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি স্বদেশের উন্নয়নে যে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে, এর প্রমাণ বর্তমান আফগানিস্তান। উপরোক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বকে চমকে দিয়ে আফগানিস্তান নগর সার্ভিসের জন্য বাস তৈরী করেছে। নিজস্ব এই বাস তৈরীর ঘোষণা দিয়েছেন গত ১৮ অক্টোবর দেশটির মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ।
তিনি বলেন, দেশীয় উৎপাদন শিল্পে একটি একটি মাইল ফলক। আফগানিস্তান উল্লেখযোগ্য আল্লাহর রহমতে আত্মনির্ভলশীলতা ও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত মাসে মিডিয়ায় ‘বদলে যাচ্ছে আফগানিস্তানের অর্থনীতি’ শীর্ষক অপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার তিন বছর পূর্ণ হলো। ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট যখন তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন দেশটি ছিলো বৈদেশিক মূদ্রাশূন্য দুর্ভিক্ষের একটি দেশ। অর্থনীতি ছিলো যুদ্ধবিধ্বস্ত। ফলে দেশটির ঘুরে দাঁড়ানো ছিলো কঠিন। কিন্তু তালেবান সরকার তাদের আইন শৃংখলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যও পুনরুজ্জীবিত করতে পেরেছে। এই সরকারের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন। বিশ্লেষকদের মতে, মূলত তালেবানের নীতিগত পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতে। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থনীতির চাকা দ্রুত ঘুরতে শুরু করেছে।
বলা বাহুল্য, আফগানিস্তানে প্রচুর খনিজ সম্পদ রয়েছে। তালেবান সরকার সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। যখন বর্হিবিশ্বের কোন গুরুত্বপূর্ণ দেশই তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি তখনো তারা হতোদ্যম হয়নি। দেশী প্রযুক্তিতে উন্নতি সাধনে হয়েছে সচেষ্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্ণিত নতুন অত্যাধুনিক চকচকে যে বাসের ছবি প্রকাশ করেন জবিহুল্লাহ এর ডিজাইন ও উৎপাদনের জন্য তালেবান সরকার কাবুলের আফগানিস্তান টেকনিক্যাল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এবং ‘এনটোপ’ নামক সংস্থাকে সহায়তা করেছে। গাড়িটি প্রদর্শনের সময় জানানো হয়, এটি আফগানিস্তানের জন্য একটি গর্বের বিষয়, যা দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরশীলতার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অক্টোবরে কাতারের দোহাতে বিখ্যাত ‘জেনেভা অটো প্রদর্শনীতে গাড়ির একটি সুপার কারের মডেল প্রদর্শন করা হয়। তালেবান সরকার এই অত্যাধুনিক সুপার কার তৈরি করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলো তখন।
বলা বাহুল্য, বর্তমান তালেবান সরকার কৃষির পাশাপাশি শিল্পোন্নয়নে বিশেষ জোর দিয়েছে, এর প্রমাণ উপরোক্ত সুপার কার ও বাস উৎপাদনের ঘটনা। আফগানিস্তান এক সময় বিশ্বে আফিম উৎপাদনে শীর্ষে ছিলো। তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর আফিম উৎপাদনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে আফিমের ফলন প্রায় ৯৫ শতাংশ কমে যায়। আফিমের বদলে তারা জাফরানের আবাদ বৃদ্ধি করে। আফগানিস্তান গত বছরে ভারত, সৌদিআরবসহ কয়েকটি দেশে ৩৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রায় ৩০ টন জাফরান রফাতানি করে। বর্তমানে দেশীয় বাজারে প্রতি কেজি জাফরানের দাম এক লাখ ২০ হাজার আফগানি।
সর্বোপরি অতুলনীয় দেশপ্রেম ঈমান ও সততার কারণে এক সময়ের যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও দুর্ভিক্ষের দেশ এখন আত্মনির্ভরশীল দেশে পরিণত হয়েছে। আর এভাবে চললে আগামী কয়েক বছরে দেশটি উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়া অসম্ভব নয়, এমন অভিমত অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের। অথচ আফগানিস্তান নিয়ে ইসলাম ও মুসলিম মহলসহ পশ্চিমা বিশ্বে অপপ্রচার কম হয়নি। বলা হয়েছিলো, তালেবানরা ক্ষমতায় গেলে দুর্ভিক্ষে আফগানরা মারা যাবে। নিজেদের মধ্যে অর্থাৎ গোষ্ঠীগত হানাহানি ও রক্তপাতের ফলে দেশটি বিভক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু এসব কিছুই ঘটেনি। তালেবানদের সততা ও নৈতিকতার আদর্শ পশ্চিমাদের সহযোগিতা ছাড়াই আফগানিস্তানকে উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে, যে আদর্শ তৃতীয় বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে প্রতীয়মান নয়।