ভেজাল নিয়ে ভেজাল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০:৩৫ অপরাহ্ন
খাদ্য সামগ্রীতে ভেজালের চিত্র অহরহ। ভেজালকারী বড়ো বড়ো ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে এ ধরণের মারাত্মক অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। কারণ শুধুমাত্র রাজধানীতেই রয়েছে খাদ্যে ভেজাল বিষয়ক মামলার বিচারকারী দেশের একমাত্র আদালত। ইতোপূর্বে হাইকোর্ট সরকারের প্রতি প্রতিটি জেলায় একটি করে এ ধরণের আদালত প্রতিষ্ঠার আদেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে দেশ ভেজাল খাদ্যপণ্যসামগ্রীতে সয়লাব হয়ে গেলেও এ সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের জন্য জেলা পর্যায়ে কোন কাজ হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীর একমাত্র আদালতে বর্তমানে লোকবল সংকট বিদ্যমান। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং মহাখালিস্থ পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির একই ধরণের কিছু লোক প্রায়ই এই আদালতের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। তারা খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী এবং নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের থেকে বিরত থাকে।
খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে মাঝে মাঝে কিছু অভিযান পরিচালিত হলেও তা শুধু খুচরো কিংবা ছোট খাটো প্রতিষ্ঠান পর্যায় পর্যন্ত সীমিত থাকে। পাইকারী ব্যবসায়ী, আড়তদার, প্রস্তুতকারক ও কলকারখানা পর্যায়ে এসব অভিযান পরিচালনা হয় না বললেই চলে। সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বড়ো অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় এসব ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান। উপরোক্ত ল্যাবরেটরীতে খাদ্যের একটি স্যাম্পুল বা নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট বা সার্টিফিকেট এক সপ্তাহের মধ্যে প্রদানের নিয়ম থাকলেও মাসের পর মাস চলে যায় কিন্তু রিপোর্ট দেয়া হয় না। পরে উৎকোচের বিনিময় বানোয়াট রিপোর্ট দেয়া হয়। এ ব্যাপারে খাদ্যে ভেজাল সংক্রান্ত আদালত হস্তক্ষেপ করলে প্রভাবশালী গোষ্ঠী আদালতের জজকে পর্যন্ত বদলী করে দেয়। এ ধরণের ঘটনা এই আদালতে ঘটার নজির রয়েছে।
২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার হলে দেশে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু পরে এ অবস্থার অবনতি ঘটে এবং অসাধু ব্যবসায়ী ও ভেজালকারীরা কৌশলে এসব অভিযানের গতি শ্লথ করতে সমর্থ হয়। বর্তমানে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য চরমে। দেশের তেল, ঘি, চিনি, গুড়, ময়দা, রুটি, বিস্কুটসহ প্রায় প্রতিটি সামগ্রীতে মেশানো হচ্ছে ভেজাল। দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এসব সামগ্রী। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন। একটি সুস্থ ও কর্ম জনগোষ্ঠীর স্বার্থে এ অবস্থার অবসান প্রয়োজন। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের উর্ধতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।