গুজবের গজব!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন
পতিত স্বৈরাশসক শেখ হাসিনা ও তার বহু শীর্ষ নেতা মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের নানামুখি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ফেইসবুকসহ যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সরকার বিরোধী অপপ্রচারের স্থান বলে অভিযোগ করতো সাবেক শাসক দল ও তাদের সরকার, তারাই এখন আটঘাট বেঁধে এসব প্লাটফর্মে নেমে পড়েছে, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে। যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগ এনে আওয়ামী সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার লোকজনের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা দিয়েছে ও জেলে পুরেছে সেই আওয়ামী লীগের নেতানেত্রী ও মন্ত্রীরা এখন সেই অপপ্রচারে মেতে ওঠেছেন ফেইসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায়। তবে আওয়ামী লীগের সৌভাগ্য এখন তারা অন্তর্বতীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে যতো অপপ্রচার চালাক ও মিথ্যাচার করুক, তারা বর্তমান সরকার কর্তৃক গ্রেফতারের কোনো আশংকা নেই। কারণ হাসিনার সৃষ্ট ও জারিকৃত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিংবা সাইবার আইনের অপব্যবহার আর এখন নেই। আর এই সুযোগে হাসিনার অনুসারীরা এখন যা খুশি তা-ই লিখছে, মন্তব্য করছে ও পোস্ট দিচ্ছে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়ে তারা যে মিথ্যাচার করেছে এবং অপপ্রচার চালিয়েছে, তা গোটা দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমনকি তারা এই বলে প্রচারণা চালায় যে, সেনাবাহিনী প্রধান কানাডায় ঢুকতে পারবেন না। ৫ আগস্টের পর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে কানাডা সরকার তাকে ঢুকতে দেবে না বা দেয়নি। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ও সেনা প্রধানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। দেশে ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টা সেনাবাহিনী প্রধানসহ ৩ হাজার সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করবেন। কিন্তু ইতোমধ্যে সেনা প্রধান কানাডায় সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাত করেছেন আন্তরিক পরিবেশে। রটনা বা অপপ্রচারের কিছুই ঘটেনি। শুধু কিছু দিনের জন্য দেশের মানুষকে উত্তেজনা ও উদ্বেগের মধ্যে ফেলে রাখে অপপ্রচার বা গুজব রটনাকারীরা।
শুধু প্রধান উপদেষ্টা কিংবা সেনাপ্রধানই নয়, রাষ্ট্রপতিকে নিয়েও নানা গুজব ছড়াতে দেখা যাচ্ছে এই কুচক্রী মহলকে। রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে সরকার, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র নেতাদের মাঝে কিছু বিতর্ক ও জটিলতা আছে, একথা সত্য। কিন্তু এটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও মনোমালিন্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে পতিত স্বৈরশাসকের দোসররা। তাদের গডফাদার হিসেবে কাজ করছে ভারত ও তাদের মিডিয়া। এদেশের বিভিন্ন মহল বিশেষভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টির কোনো সুযোগই তারা হাতছাড়া করছে না। এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার চরিত্র হনন এবং ভাবমূর্তি নষ্টেরও চেষ্টা করছে ভারতীয় বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়াগুলো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিশে^র সকল উন্নত ও সভ্য দেশের সরকারের অতি প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক আইএমএফ এডিবিসহ বিশে^র সকল বড়ো বড়ো সংস্থা তাকে সব ধরণের সহায়তা প্রদানে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা ড. ইউনুসের সরকারকে সাহায্য করে নিজেরা গৌরবান্বিত হতে চায়। এজন্য এসব সংস্থা ও সংগঠন তাকে যতোটুকু প্রয়োজন ততোটুকু আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইতোমধ্যে। কিন্তু এটাও সহ্য হয়নি বৈরী ও হিংসুক দেশ ভারতের মিডিয়াগুলোর। তারা সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্ব ব্যাংক ড. ইউনুসের ওপর অসন্তুষ্ট। এছাড়া প্রতিনিয়ত এসব মিডিয়া বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে চলেছে, যা দেখে ও শুনে পাঠকমহল যুগপৎ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ।