দুর্ভোগের ব্যাংক খাত
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২০:০৬ অপরাহ্ন
সম্প্রতি সিলেটের গোলাপগঞ্জে টাকা তুলতে না পারায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। এমন খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। অবশ্য ব্যাংকে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভের খবর নতুন নয়, বেশ কয়েক মাস যাবৎ এসব প্রায়ই ঘটছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে এমনকি এদেশেও ব্যাংক বলতেই একটি নিরাপদ, বিশ্বস্ততা ও আস্থার স্থানের চিত্র মানুষের মানসপটে ভেসে ওঠতো। কিন্তু বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এই নিরাপদ স্থানটি নিরাপদ থাকলেও বাংলাদেশে তা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে শেখ হাসিনার দেড় যুগের শাসনামলে।
অতীতে এদেশের ব্যাংক থেকে গ্রাহকবেশী কোন কোন প্রতারক চেক বা সই জাল ধরে কিছু টাকা আত্মসাত করলে ব্যাংক ও গ্রাহক মহলে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জাল বা আত্মসাতকারীকে পাকড়াও করা হতো, আদায় করা হতো অর্থ। বলা হতো, ব্যাংকের টাকা মেরে পার পাওয়া সহজ নয়, কিংবা সম্ভব নয়। আর কোন ব্যাংক কর্মকর্তা কিংবা ম্যানেজার কর্তৃক অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ছিলো বিরল। কোন ব্যাংকে বহু বছরে কদাচিৎ এমন ঘটনা ঘটতো। আর এজন্য ব্যবস্থা ছিলো কঠোর কঠিন শাস্তির।
কিন্তু বিগত দেড় যুগে এদেশের ব্যাংক খাতকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়ে গেছে শেখ হাসিনার দুর্নীতিবাজ সরকার। শুধু সাধারণ ব্যাংকগুলোই নয়, কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ ব্যাংককে তছনছ করে গেছে এই দুর্বৃত্ত সরকার। রাষ্ট্রের রিজার্ভ থেকেও বিপুল অর্থ আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। দেশে বিদেশে তুমুল আলোচনা সমালোচনা হয়ে, একাধিক ডকুমেন্টারি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে। এই চুরির সাথে ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তির জড়িত থাকার ইংগিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ডঃ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা তার শাসনামলে দেশটির একটি গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) কিছু সদস্যের যোগসাজসে ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার আত্মসাত করা হয়েছে। দুর্বৃত্ত মাফিয়া ব্যবসায়ী এস আলম একাই ১০ বিলিয়ন লোপাট করেছে। তাদের লোভের আগুনে পুড়ে এদেশের বহু নামীদামী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক এখন প্রায় দেউলিয়া। তারল্য সংকটে ভুগছে অনেকগুলো। হারিয়েছে গ্রাহকদের আমানত ও আস্থা। দিতে পারছে না গ্রাহকদের টাকা।
বলা বাহুল্য, গত দেড় দশকে ব্যাংক খাত ছাড়াও ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে পুঁজিবাজার। এখানেও হারিয়েছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা। সর্বোপরি দেশের প্রতিটি আর্থিক খাত ক্ষতবিক্ষত হয়েছে লোভী স্বৈরশাসক হাসিনা ও তার দোসরদের নখরাঘাতে। তারা প্রতিটি আর্থিক খাত থেকে অর্থ শুষে নিয়েছে নিঃশেষে রক্তপায়ী দানব ড্রাকুলার মতো।
বর্তমানে এসব খাতে সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। দেশের অন্যতম সেরা অর্থনীতিবিদ গভর্ণর ডঃ মনসুর, ডঃ সালেহ উদ্দীন ও ওয়াহিদ উদ্দীন মাহমুদের মতো ব্যক্তিরা এই কাজে নিয়োজিত। ইতোমধ্যে লুট হওয়া অর্থের একটি অংশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, লুন্ঠিত ও পাচারকৃত অর্থের বড় অংশ পুনরুদ্ধারও দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে এই নতুন অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবত্তোর সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে।