সিন্ডিকেটের মূলে কুঠারাঘাত
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০:২৭ অপরাহ্ন
উপদেষ্টাদের কঠোর হুশিয়ারির পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে শুরু হয়েছে আমলাদের তৎপরতা। রুটিন মাফিক দায়সারা দায়িত্ব পালনের বৃত্ত অতিক্রম করে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এখন বাজার মনিটরিং শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন নগরী ও শহরে মজুদদার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। বহু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও দোকান মালিককে জরিমানা করা হয়েছে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু পণ্যের দাম কিছুটা হলেও কমেছে। অতীতে যে পেঁয়াজের দাম সিন্ডিকেটিংয়ের কারণে প্রতি কেজি সাড়ে ৩শ পর্যন্ত হয়েছে, তা এখন ১০০-১২০ টাকার মধ্যে রয়েছে। অন্যান্য বেশ কিছু পণ্যের দামও এখন কমতির দিকে।
গত কয়েকদিন দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু দোকানসহ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। গত রোববার সিলেটের জকিগঞ্জে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মূল্য তালিকা না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য বিক্রিসহ নানা অনিয়মের জন্য এই জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া ঐদিন ফেঞ্চুগঞ্জে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির দায়ে ভোক্তা অধিকার আইনে ২ দোকানকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
অপরদিকে সবজীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা দেশব্যাপী যে অভিযানে নেমেছে, তা রীতিমত বৈপ্লবিক। তারা কৃষকদের নিকট থেকে সবজী কিনে সেই দামে বিভিন্ন বাজারে সবজি বিক্রি করছে। এর ফলে সারা দেশে দ্রুত সবজীর দাম হ্রাস পেয়েছে। সাধারণ সীমিত আয়ের মানুষ অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। দেখা গেছে, একটা লাউ কৃষকের নিকট থেকে ২০-২৫ টাকায় কিনে এনে প্রায় একই দামে বিক্রি করছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ এই লাউ কিছুদিন আগে ৭০-৮০ টাকা এমনকি এর চেয়েও বেশী দামে বিক্রি হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য সবজিও বিক্রি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যেই পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে অনেক পণ্যের দাম কমেছে। আগামী বছর বৈশ্বিকভাবে গড়ে পণ্যের দাম গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থানে চলে আসবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে গম, তেল, চিনি ইত্যাদির দাম অনেকটাই কমেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম কমেনি। বরং অনেক আরো বেড়েছে। এজন্য যে অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দায়ী এতে কোন সন্দেহ নেই। স্বৈরশাসক হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এখনো সক্রিয়। তবে বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
আশা করা যায়, অচিরেই এ ব্যাপারে সুফল পাওয়া যাবে। সরকারের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা ও অনেক সংগঠন যেভাবে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারে নেমে এসেছে, তা জাতি হিসেবে অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। সিন্ডিকেটিং না ভাঙ্গা পর্যন্ত এ ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে, এমন প্রত্যাশা ও দাবি জনগণের।