ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:২৭ অপরাহ্ন
বাণিজ্য উপদেষ্টা ডঃ সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। দেশীয় শিল্পের বিকাশে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। পাশাপাশি রিজার্ভও বাড়ছে। অত্যন্ত আশা সঞ্চারী এই বক্তব্য। অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ এই অর্থনীতিবিদের এমন বক্তব্যকে শুধু বাগাড়ম্বর কিংবা ফাঁকা বুলি বলে উড়িয়ে দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
একথা অনস্বীকার্য যে, বিগত দেড় দশকের সীমাহীন দুর্নীতি অনিয়ম ও লুটপাটে প্রায় বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার কোন সহজ ব্যাপার নয়। তা সত্বেও অর্থনীতি প্রায় প্রতিটি সূচকে উন্নতির লক্ষণ শুরু হয়েছে। যে রিজার্ভ নিয়ে গত ক’বছর তুমুল আলোচনা সমালোচনা তথা তুলকালাম হয়েছে সেই রিজার্ভ এখন সন্তোষজনক অবস্থায় চলে এসেছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স এই রিজার্ভকে ক্রমাগত পরিপুষ্ট করে চলেছে। এছাড়া বিগত গণঅভ্যুত্থান, বন্যা ইত্যাদির চাপ ও ধকল সত্বেও অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট স্থিতিশীল অবস্থানে আছে। বিপ্লবোত্তর আইন শৃংখলা পরিস্থিতির শোচনীয় অবস্থা ও বিশৃংখলার ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যতোটা খারাপ হওয়ার কথা তা হয়নি। নতুন সরকার দৃঢ়তা ও সততার সাথে সেটা বেশ ভালোভাবেই সামলে নিয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার দরুণ মূল্যস্ফীতি আরো বৃদ্ধির আশংকা ছিলো। কিন্তু তা হয়নি। ভোক্তা অধিদপ্তরসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বাজার মনিটরিং জোরালো করেছে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সবজির দাম উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ডিম ও মাংস নিয়ে কারসাজির মাত্রা কমেছে। বাজারে মাছ সরবরাহ প্রচুর। প্রধান খাদ্যশস্য আমন ধান আসার আগে চালের বাজার সাধারণত চড়া থাকে। তবে মনিটরিং আরো জোরদার করলে এবার চাল নিয়ে চালবাজির সুযোগ কম হবে। ভোজ্য তেল অর্থাৎ সোয়াবিন তেল নিয়ে রিফাইনারী তথ্য ব্যবসায়ীরা বিগত বছরগুলোতে যে তেলেসমাতি করেছে, তা জাতি কখনো ভুলবে না। দফায় দফায় এমনকি প্রতি মাসে তারা একচেটিয়া ব্যবসার সুবাদে ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়েছে। এ কাজে তাদের সহায়তা করে পতিত আওয়ামী সরকারের শীর্ষ নেতামন্ত্রীরা। প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ছত্রছায়া প্রদান করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তি ও আমলারা। বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কারসাজি ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে চালের দাম নিয়ে সীমাহীন চালবাজি তথা দুর্নীতি হয়েছে। এসব এখন মোটামুটি বন্ধ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম আশানুরূপ হ্রাস পাবে আগামী বছরগুলোতে।
সবচেয়ে বড় কথা, সরকারের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গী ও পদক্ষেপের কারণে অসৎ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা সুবিধা করতে পারছে না, পারছে না হঠাৎ সংকট সৃষ্টি করে পণ্য নিয়ে কারসাজি করতে। অতীতে শুধু পেঁয়াজ নিয়ে যা হয়েছে, তা জনগণের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ভারতের মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজস করে এদেশের ক্ষমতাঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা এখন জনগণের পকেট কাটার সুযোগ হারিয়েছে। ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য আমদানির অনুমতি প্রদানের ফলে একচেটিয়া ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট ভেঙ্গে গেছে। সর্বোপরি, দেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।