স্বৈরাচারের তাবেদারি আর কতোকাল?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:১২ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘বিক্ষোভের মুখে শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে বন্ধ হলো নাট্য প্রদর্শনী’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, একদল বিক্ষোভকারীর প্রতিবাদের মুখে শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্য প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যকলা মিলনায়তনে নাট্যদল দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরান’ নাটকের প্রদর্শনীতে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘন্টা ৪০ মিনিট দৈর্ঘ্যরে নাটকটি শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগে প্রদর্শনী থামিয়ে দিতে হয়।
জানা গেছে, সন্ধ্যা ৭টায় নাটকের প্রদর্শনী শুরু হয়। এর ঘন্টা খানেক আগে দেশ নাটকের মূখ্য পরিষদের সদস্য সচিব এহসানুল আজিজ বাবুর বিরুদ্ধে একদল মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে। তারা জাতীয় নাট্যশালার মূল ফটকের বাইরে একটি ব্যানার টাঙ্গিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা যে ব্যানার টানিয়ে বিক্ষোভ করেন সেই ব্যানারে লেখা ছিলো, ‘আওয়ামী লীগের দোসরমুক্ত বাংলা চাই’। দেশ নাটকের দলনেতা এহসান উল আজিজ বাবুকে আমাদের হাতে দিন। ব্যানারে আরো লেখা ছিলো, ‘ফেসবুকে বর্তমান সরকারকে নিয়ে কটুক্তি করায় এবং তাদেরকে রাজাকার বলে নাটক নির্মাণ করায় এহসানুল আজিজ বাবুর বিচার চান তারা।
উপরোক্ত ঘটনাটি যে কোন নাট্যমোদী ও সংস্কৃতিমনা মানুষের খারাপ লাগলেও এমন কিছু ঘটাই ছিলো স্বাভাবিক ও আবশ্যম্ভাবী। বিগত কয়েক যুগ ধরে বিশেষভাবে গত দেড় যুগের স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে নাট্যকর্মীসহ সংস্কৃতি কর্মীদের সিংহভাগই তাদের শিল্পকর্মে এদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ^াস ও সংস্কৃতির প্রতিফলন না ঘটিয়ে বরং এগুলো নিয়ে বিদ্রুপ ও উপহাস করে আসছেন। এ পর্যন্ত তাদের প্রচারিত ও মঞ্চস্থ এমন কোন নাটক খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে এদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ^াস, আদর্শ ও সংস্কৃতি নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ নিয়ে কটাক্ষ করা হয়নি।
মৌলবাদের সমালোচনার ছদ্মবরণে ও অজুহাতে তারা ইসলাম ধর্ম নিয়ে এ পর্যন্ত বিস্তর কটাক্ষ ও কটুক্তি করেছে তাদের লেখা ও উপস্থাপিত নাটকগুলোতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এসব লেখক শিল্পী ও নাট্যকর্মী নামধারী নাস্তিক ও স্বৈরাচারের দালাল গোষ্ঠী একটি নাটকেও গত দেড়যুগের নির্যাতন, নিপীড়ন, খুন, গুম কিংবা দুর্নীতি, লুটপাট, ধর্ষণ, জুয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে একটি ডায়লগও তুলে ধরেনি। এভাবে বছরের পর বছর তারা স্বৈরাচারের অন্যায় অপকর্ম ও অপরাধের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে স্বৈরশাসকের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে, সহযোগিতা করেছে। এখনো তারা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে।
ঐসব দালাল কবি সাহিত্যিক ও শিল্পী হাজার হাজার মানুষের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশের পক্ষে কোন নাটক না লিখে বর্তমান সরকারের বিরোধিতা ও কটুক্তি করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে, যখন সহ¯্রাধিক শহীদ পরিবারের কান্না থামেনি, হাজারো আহত পঙ্গু আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা হাসপাতালের শয্যা কিংবা বাড়িতে বিছানায় শুয়ে দেহে বুলেট পিলেট নিয়ে কাতরাচ্ছে। দেশের প্রায় সব সেক্টর ধ্বংস করে ফেলা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে এসব সংস্কৃতি কর্মী টু শব্দ করেনি দেশের ব্যাংকগুলো লুটে নিয়ে লক্ষ কোটি বিদেশে পাচার করা হলেও। শিল্প কখনো শিল্পের জন্য নয়, বরং জীবনের জন্য। কিন্তু যখন এই শিল্পে জনগণের আশা আকাংখার প্রতিফলন না ঘটে মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার বিরুদ্ধে পক্ষ বা অবস্থান নেয়, তখন সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হবেই, এটাই স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাবিক ঘটনাই ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যমঞ্চে। আমরা সুশীল নামধারী দালাল ও ভারতপন্থী কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীদের এদেশের জনগণের কবি সাহিত্যিক ও শিল্পী হয়ে ওঠার এবং মানবতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।