ট্রাম্পের শান্তির বার্তা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:৫৮ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ নিয়ে যে বার্তা দিলেন ট্রাম্প’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিজয়ী ভাষণে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের অবসানে কাজ করার ইংগিত দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, ‘আমি যুদ্ধ শুরু নয়, যুদ্ধ বন্ধ করতে যাচ্ছি’। তিনি আরো বলেন, আমাদের শাসনামলে কোন যুদ্ধ ছিলো না। আমরা আইএসকে পরাজিত করেছিলাম। এর বাইরে চার বছরে আমাদের আর কোন যুদ্ধ ছিলো না। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, রিপাবলিকান এই নেতা ইউক্রেইন ও ইসরাইলের দিকেই মনোযোগ দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিলো অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ ও ঐতিহাসিক। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বহু ইস্যু যেমন এই নির্বাচনের ফলাফলের সাথে জড়িত, তেমনি বৈশ্বিক বহু বিষয়ও এর সাথে সম্পৃক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অর্থনৈতিক। দেশের জনগণ ক্রমবর্ধমান পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধিতে বিব্রত ও বিরক্ত ছিলো বাইডেনের শাসনামলে। অথচ এদিকে যথেষ্ট মনোযোগ না দিয়ে বাইডেন ব্যস্ত ছিলেন ইউক্রেইন যুদ্ধে ইউক্রেইনকে এবং গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে অকাতরে অর্থ প্রদানে। এসব পছন্দ করেনি যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা। এর সাথে বাইডেনের ইসরাইল তোষণ নীতি ক্ষিপ্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মুসলিম ভোটারদের। এই ক্ষোভ এতোই প্রবল ছিলো যে, বাইডেনের অনুকূল ও উদারপন্থী অভিবাসন নীতিও তাকে রক্ষা করতে পারেনি। অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্বজনদের বিপুল সমর্থন সত্বেও ব্যর্থ হয়েছে ডেমোক্র্যাটদের বিজয়ের প্রত্যাশা।
ট্রাম্পের রিপাবলিকানদের এই ‘ল্যান্ড স্লাইড ভিক্টোরি’ অর্থাৎ বিশাল বিজয় শুধু মার্কিন জনগণই নয়, গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। ট্রাম্প শুধু ইলেক্টোরাল ভোটই নয়, পপুলার ভোটও পেয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের চেয়ে বেশী। সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠ তার দল।
বিশ্লেষকদের মতে, ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন নিজ দেশের নাগরিকদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে যতোটা নজর দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশী নজর দিয়েছেন বিশ্বে তার মিত্র দেশগুলোর স্বার্থের দিকে। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি প্রভাব বাড়াতে তিনি অকাতরে ব্যয় করেছেন দেশের করদাতাদের অর্থ। যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির জন্য তিনি চীন ও রাশিয়া ঠেকানোর কর্মসূচী গ্রহণ করেন। সত্যি বলতে কি এসব বিষয়ে তার দেশের সাধারণ মানুষের তেমন কোন আগ্রহই ছিলো না।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে ঠেকাতে তার ফিলিস্তিন বিরোধী ইসরাইল নীতি দেশের ছাত্রসমাজ তথা তরুণ প্রজন্মকে ক্ষুব্ধ করেছে। ইসরাইলী গণহত্যায় সহায়তা করে তিনি তার নির্বাচনী পরাজয়ে শেষ পেরেক ঠোকার ব্যবস্থা করেছেন।
ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের আশ্বাস দিলেও তা কতোটুকু কার্যকর হবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে সচেতন মহলে। তবে ট্রাম্পের শাসনামলে যুদ্ধে ডামাঢোল ও তেজ যে অনেকটাই কমে আসবে এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। ট্রাম্পের সুবাদে বর্তমান উত্তপ্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ বিশ্বে যদি অস্ত্রের ঝনঝনানি নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিপ্রিয় জনগণসহ বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় উপহার, এম অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।