‘যে যা করো আপনার লাগি’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৫:৩০ অপরাহ্ন
সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় একটি প্রবাদ আছে ঃ ‘যে যা করোরে বন্দা (বান্দা) আপনার লাগি’ অর্থাৎ যে যেমন কর্ম করবে তেমন ফল পাবে। আর শুদ্ধ বাংলায় এ বিষয়ে প্রবাদটি হচ্ছেঃ ‘যে অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়ে, সে নিজে ঐ গর্তে পড়ে শেষে’। বর্তমান সময়ে এই প্রবাদটি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের ক্ষেত্রে সত্য ও বাস্তব হয়ে ওঠেছে। তাদের পছন্দের হাসিনা সরকার না থাকায় ভারত বাংলাদেশের ওপর এখন যারপর নাই ক্ষুব্ধ। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনভাবেই মেনে নিতে বা সহ্য করতে পারছে না ভারত।
ভারত সরকার কিছুটা রেখে ঢেকে কৌশলে হলেও ভারতীয় মিডিয়াগুলো প্রকাশ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত ও বিব্রত হলেও সবাই এখন এসব প্রচার প্রোপাগান্ডার প্রকৃত সত্য ও রহস্য অনুধাবনে সক্ষম। ভারত সরকার ও ভারতীয় মিডিয়াগুলোর অপপ্রচারের একটি বড়ো বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতন। খোদ এদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ই যখন মিছিল, মিটিং করে কিংবা মিডিয়ায় এসে বলছেন যে, বাংলাদেশে আমরা ভালো আছি, আমাদের ওপর কোন নির্যাতন হচ্ছে না এবং তাদেরকে শান্তিতে থাকতে দেয়ার জন্য ভারতের ঐসব অপপ্রচারকারীদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন, তখন ভারতের কুচক্রী মহল এ ধরনের মিথ্যাচার ও মিথ্যা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
গতকাল মিডিয়ায় ‘বাংলাদেশ আমদানি না করলে পথে বসবে ভারতীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তখন থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে অবনতি দেখা দেয়। এতে আরো বলা হয়, শুধু কলকাতার নিউমার্কেটের হোটেল রেস্তোরাঁ কিংবা চেন্নাইয়ের হাসপাতাল নয়, এবার পথে বসার আশংকা করছেন সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ীরাও। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শুরু হলেও এখনো বাংলাদেশ থেকে পর্যাপ্ত অর্ডার আসেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কে একচেটিয়া লাভবান হয় ভারত। উপকূলীয় এলাকায় এককটি গ্রামের শত শত পরিবার এই শুঁটকি মাছের ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল। সব মৌসুমে রপ্তানীর মাধ্যমে আয় হয় শত শত কোটি রুপী। ফলে নতুন বাজার না পাওয়ার আগেই বাংলাদেশে রপ্তানী বন্ধ হলে অর্থনৈতিকভাবে বিপদের মুখে পড়বে এসব পরিবার। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তান থেকে সরাসরি সমুদ্রপথে যোগাযোগ শুরু করেছে বাংলাদেশ। দেশ দু’টির মধ্যে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য শুরু হওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না ভারত। মুখে নিরাপত্তার হুমকির কথা বললেও বাংলাদেশে পণ্যের বাজার হারানোর ভয়ে ভীত ভারত। জানা গেছে, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে কনটেইনারে পণ্য নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরে বহিঃনোঙ্গরে পৌঁছেছে পাকিস্তানী জাহাজ। অথচ বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ভারত যদি নতুন সরকারের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ না করে সমতা ও ন্যায়নীতিভিত্তিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতো তবে বাংলাদেশ সরকার হয়তো বিকল্প দেশ তথা পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্য করতে যেতো না, এতো দ্রুত ও তীব্রভাবে ঝুঁকতো না অন্যান্য দেশের দিকে। এদিকে ভারতের কোলকাতার বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, ভারতীয় কৃষক এবং ভারতীয় হাসপাতালগুলো মারাত্মক ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম এমনকি অনেক পেশাজীবী পরিবার অর্ধাহার অনাহারের সম্মুখীন। বাংলাদেশী পর্যটক ও অন্যান্য লোকজন ভারতে না যাওয়ার ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারত সরকার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণের প্রতি বিদ্বেষবশতঃ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ভিসা ইস্যু প্রায় বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থা এখনো অব্যাহত। অনেকের মতে, এর পেছনে ভারত সরকারের একটি দুরভিসন্ধি রয়েছে। তা হচ্ছে, ভারত ভিসা ইস্যু বন্ধ করলে বাংলাদেশের জনগণ বিশেষভাবে ভারত গমনেচ্ছু লোকজন বাংলাদেশ সরকারের ওপর ক্ষেপে যাবে। তারা বাংলাদেশের নতুন সরকারকে দোষারোপ করবে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় না রাখার জন্য, হাসিনাকে উৎখাত করে প্রতিবেশী ভারতকে ক্ষেপানোর জন্য। কিন্তু ভারতের এই দুরভিসন্ধী কাজে আসেনি। কারণ বাংলাদেশী জনগণ ভারতের এই অসৎ অভিপ্রায় বুঝতে পেরেছে। তারা ভারত না গিয়ে বিকল্প দেশে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য, চিকিৎসা ও পর্যটনের কাজ সারতে শুরু করেছে। এর ফলে ভারতের একূল ওকূল দুকূলই যাচ্ছে। বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা গেছে, তারপর জনগণও ক্ষুব্ধ এখন তাদের ওপর। এজন্যই কথায় বলে, যে যার জন্য গর্ত খুঁড়ে শেষ পর্যন্ত তাকেই সেই গর্তে পড়তে হয়। সর্বোপরি ভারত এখন তার বাংলাদেশ নিয়ে তার নিজের খোঁড়া গর্তে পড়েই হাহাকার করছে, এমন অভিমত অনেকের।