গণমুখী বনাম গণবিরোধী প্রকল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:২৩ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘মৌলভীবাজারের সাফারি পার্ক প্রকল্প বাতিল ঃ রশিদপুর-১১ নং কূপে অনুসন্ধান কূপ খননের অনুমোদন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, একনেক সভায় শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। মৌলভীবাজারের লাঠিটিলায় সংরক্ষিত বনে আওয়ামী লীগ সরকার যে অনুমোদন দিয়েছিলো, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বিবেচনায় সেটি বাতিল করা হয়েছে। সংরক্ষিত বনে সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদনের পর থেকে পরিবেশ ও অধিকার কর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। তাদের মতে সাফারি পার্ক হলে বনাঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। লক্ষণীয় যে, মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং লাউয়া ছড়া জাতীয় উদ্যানের ৫০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই বনাঞ্চলে ২০৯ প্রজাতির প্রাণী ও ৬০৩ ধরনের উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থানটি হাতিসহ বিভিন্ন প্রজাতির জন্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
দেখা গেছে, প্রকল্প বিশেষভাবে মেগা প্রকল্পের ব্যাপারে এক ধরনের উন্মত্ততা ছিলো স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের। পনিরবেশ তথা দেশের জন্য যতো ক্ষতিকরই হোক, প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ পেলেই স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার দোসর নেতামন্ত্রী আমলাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যেতো। হাসিনার পরিবার থেকে নতুন নতুন প্রকল্প খুঁজে বের করার জন্য বলা হতো, উৎসাহিত করা হতো। কারণ এগুলোতে তাদের একটি বড়ো অংকের অর্থের হিস্যা থাকতো। অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ এবং এর ব্যয় বৃদ্ধি করে বিপুল অর্থ লুটপাট করা হতো এভাবে। সাফারি পার্কের এই ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল হওয়ায় শুধু আর্থিক দিক দিয়েই ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা বেঁচে গেছে। পরবর্তী পর্যায়গুলোতে আরো শত শত কোটি টাকা ব্যয় ধরে এখান থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাটের আশংকা ছিলো।
বলা বাহুল্য, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার গত দেড় দশকে অগণিত মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। এমন কোন বড়ো প্রকল্প খুঁজে পাওয়া যাবে যেটা থেকে শত শত এমনকি হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড়ো প্রকল্প রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে। এই অভিযোগ শুধু জাতীয়ভাবেই নয়, আর্ন্তাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এ নিয়ে ব্রিটেনে তদন্ত হচ্ছে। দেশে তদন্ত করছে দুদক। আরেকটি বড়ো প্রকল্প হচ্ছে পদ্মা সেতু। এখানেও ২৫/৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পরিবেশবিদদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনের পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
উপরে উল্লেখিত প্রতিবেদনের একটি অংশে একনেকের সভায় প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান, উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরনের তিন প্রকল্পসহ ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ প্রকল্পের অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে দেশের প্রকৃত উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্প। ইতোমধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে নেমেছে। এতে যেমন বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে, তেমনি এসব খাতে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ খুলে যাবে। অথচ গত দেড় দশকে হাসিনা সরকার তেল গ্যাস ও জ¦ালানী খাতে রাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা অপচয় ও লোপাট করেছে। নিজেদের ও নিজেদের লোকজনের আখের গুছিয়েছে জনগণের অর্থ আত্মসাত করে। একদিকে হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতির লক্ষ্যে গৃহীত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আর অপরদিকে বর্তমান সরকারের গৃহীত প্রকল্প জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। শুধু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণই বন্ধ হয়নি বরং আগে গৃহীত ও বাস্তবায়িত না হওয়া প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ বা স্থগিত করেছেন বর্তমান সরকার। এতেও শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
অতীতের এই দুর্নীতিবাজ সরকারের লুটপাটের চিত্র এখন প্রকাশিত হতে দেখে দেশের সাধারণ জনগণ এখন আঁতকে ওঠছেন, বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হওয়ার উপক্রম অনেকের। শে^তপত্রে এর কিছুটা ওঠে এসেছে, যা দেখে জনগণ শুধু ধিক্কারই দিচ্ছেন গণবিরোধী স্বৈরাচারী সরকারকে। বাংলাদেশে এমন অবস্থার পুনরাবৃত্তি হোক, এটা চান না এদেশের কোন সচেতন ও বিবেকবান মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়াসহ মিডিয়ায় সাধারণ জনগণের ফিডব্যাক ও অভিমত থেকে এটাই এখন স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।
ক