দুঃখী সবসময় সহানুভূতিশীল হয় না
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০:৪৪ অপরাহ্ন
একজন মানুষ শৈশবে বা পরবর্তী সময়ে দুঃখ কষ্ট পেলে ভবিষ্যত জীবনে অন্যান্য মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল ও জনদরদী হয়ে ওঠবে, একথা হলফ করে বলা যাবে না। বরং সে ক্ষেত্র বিশেষে সাধারণত মানুষের চেয়েও বেশি পাষাণ হৃদয় ও দুর্বৃত্ত লুটেরা প্রকৃতির হয়ে ওঠতে পারে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনার কথা বলা যায়। পচাত্তরের হত্যাকান্ডে গোটা পরিবারের সদস্যদের হারালেও, এই শেখ হাসিনা মানুষের স্বজন হারানোর বেদনা উপলব্ধি না করে তাদেরকে নিষ্ঠুর নৃশংসভাবে খুন-গুম করেন। এতো স্বজন পরিজন হারানোর ঘটনায় দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রতি তার লোভ লালসা না কমে বরং তা আরো বহুগুণ উদ্দীপ্ত ও প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠে। রাষ্ট্র তথা জনগণের শত শত বিলিয়ন ডলার আত্মসাত করেও তারা লোভাগ্নি নেভেনি। আরো বহু বছর ধরে এভাবে অর্থ সম্পদ আত্মসাতের জন্য ক্ষমতায় থাকার জন্য ছিলেন মরিয়া। যে কোন মূল্যে, দেশের যতো মানুষকে খুন করেই হোক তিনি ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।
আরেকজন মানুষের কথা এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যিনি শৈশবে সীমাহীন আর্থিক কষ্টের মধ্যে পড়াশোনা করে রাষ্ট্রের আর্থিক খাতের শীর্ষ একটি পদে আসীন হন। কিন্তু তিনিও লোভ থেকে মুক্ত হতে পারেননি, হয়ে ওঠতে পারেননি দেশ ও জনদরদী। বরং লুটেরা শেখ হাসিনার লুটপাটকারীর সহযোগী হয়ে বিদায় নিয়েছেন এই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদ থেকে। তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর আতিউর রহমান।
গতকাল দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়ায় ‘তিন গভর্ণর যেভাবে ব্যাংক খাতে অনিয়মের সহযোগী হয়ে ওঠেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে হাসিনা সরকারের তিন বিতর্কিত গভর্ণর আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আবদুর রউফ তালুকদারের কথা ওঠে এসেছে। আতিউর রহমান সম্পর্কে উক্ত প্রতিবেদনে ‘আতিউরের মেয়াদে অনিয়মের শুরু’ সাব হেডিংয়ে বলা হয়, তার সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে দুর্বলতা দেখা দেয়। এই সুযোগে সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক জালিয়াতি হয়। তার সময়ে আবার বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতি হলেও রাজনৈতিক চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রতিরোধ প্রতিকার কিছুই করতে পারেনি। ২০১২ সালে নতুন ব্যাংক অনুমোদনের উদ্যোগ নেয়া হলে কারা তা পাবেন, সেই তালিকা গভর্ণরকে দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতাদের ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারী উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন সুবিধা পায় বে´িমকো, এমআর গ্রুপ, এসএ গ্রুপ, রতনপুর গ্রুপ, কেয়া গ্রুপ, যমুনা থার্মেস, শিকদার, আবদুল মোমেন ও এননটেক্স গ্রুপ। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বড়ো প্রশ্ন ওঠে।
কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর থাকাবস্থায় এতো কিছু ঘটলেও শৈশবের রাখাল বালক থেকে পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর হওয়া আতিউর কেনো তার পেশাগত জীবনে অতীতের সততা ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলেন না? কেনো তিনি জীবনযুদ্ধে একজন সংগ্রামী মানুষের মতো শেখ হাসিনার চরম দুর্নীতিবাজ সরকারের অনিয়মের সঙ্গী হলেন, তাদের সাথে হাত মেলালেন, আপোষ করলেন? অথচ তিনি গভর্ণর হওয়ার পর তার সংগ্রামী অভাবী অতীত জীবনের কথা অকপটে জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। এতে গৌরব বোধ করেছেন। এলাকার মানুষের চাঁদার টাকায় পড়াশোনার কথা তিনি লজ্জা না করে প্রকাশ করেছেন। একই সময়ে এই সাধারণ জনগণের ঋণ শোধের প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহতম ক্ষতিকর রিজার্ভ চুরির ঘটনা তিনি দীর্ঘ সময়ে গোপন রাখেন, যা তার পেশাগত অসততার পাশাপাশি নিজের প্রতিশ্রুতির চরম লংঘন। তা-ই বলা যায় শৈশবে বা জীবনের কোন এক পর্যায়ে একজন মানুষের জীবনে করুণ কোন ঘটনা ঘটলেও সেই ঘটনা তাকে করুণ ও সহানুভূতিশীল না করে দুর্বৃত্ত খুনী, লোভী ও কঠোরদের সাথে আপোষকামী ও সহযোগী করে তুলতে পারে। সাবেক গভর্ণর আতিউর এর একটি জ¦লন্ত উদাহরণ। একইভাবে তার সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি ও গড ফাদার হাসিনার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।
অতীতের দুঃখ ও স্বজন হারানোর বেদনা তাকে দেশের জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দরদী না করে আরো দানবীয় ডাইনী রূপী খুনী অমানুষে পরিণত করে।