ভ্যাট আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ জরুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৫:৩০ অপরাহ্ন
ভ্যাট হলো একটি নির্দিষ্ট হারে পণ্য ও সেবার উপর আরোপিত একটি ট্যাক্স বা কর। এটি একটি অন্তর্বর্তী কর, যার অর্থ হলো এটি বিতরণকারীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত ভোক্তা বা ক্রেতাদের দ্বারা পরিশোধিত হয়। অর্থাৎ ক্রেতা বা ভোক্তারাই ভ্যাট পরিশোধ করেন। ভ্যাটের মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা। ভ্যাটের অর্থের দ্বারা সরকার বিভিন্ন সরকারী ব্যয় যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সংগ্রহ করতে পারে।
গতকাল মিডিয়ায় ভ্যাট সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘ভ্যাট আদায়ে ঘরে ঘরে এনবিআর’ শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট আদায় বাড়াতে ঘরে ঘরে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এনবিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ভ্যাট আদায় হয়েছে ৪১১৯২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা ৫১৯০৪ কোটি টাকার চেয়ে অনেক কম।
প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৯১ সালে এদেশে ভ্যাট চালুর পর থেকে এই ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে চালু ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কতোটুকু সফল হয়েছে। আজো ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এতোটা পিছিয়ে কেনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভ্যাট হিসেবে আদায়কৃত অর্থ যদি দেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে যথেষ্ট জোর দেয়া হচ্ছে না কেনো?
বিস্ময়কর হলেও সত্য, এদেশের লক্ষ লক্ষ ব্যবসা ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দিলেও আরো বহু লক্ষ প্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাটের বাইরে রয়ে গেছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। আর এক্ষেত্রে উৎকোচের বিনিময়ে সহায়তা করছেন ভ্যাট আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
বলা বাহুল্য, ২০২০-২১ সালে খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায় রাজস্ব আদায় বাড়াতে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস ব্যবস্থা চালু করে। ২৫ ধরনের ব্যবসায় লেনদেন পর্যবেক্ষণ ও সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করাই ছিলো এই উদ্যোগের লক্ষ্য। সরকার বর্তমানে এই ডিভাইস স্থাপন এবং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আউটসোর্সিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জানা গেছে, খুচরা ও পাইকারী পর্যায়ে প্রধানত: ভ্যাট ফাঁকি দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, সব খুচরো ও পাইকারী ব্যবসাকে এই মেশিন ব্যবস্থার আওতায় আনা গেলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। ২০০৮ সালে এনবিআর হোটেল, রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকান, জুয়েলার্স, বিউটি পার্লার, পাইকারী ও বড়ো খুচরো দোকানসহ ১১ ধরনের ব্যবসায় ই-ক্যাশ রেজিস্ট্রার বাধ্যতামূলক করেছিলো। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলাফল প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রাজস্ব কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে ই-ক্যাশ রেজিস্ট্রার ব্যবহার না করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, ভ্যাট হিসেবে আদায়কৃত অর্থ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতসহ নানা উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়। কিন্তু বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকারের সময় সরকারের ঘনিষ্ঠজন ও সরকারী দলের লোকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই ভ্যাট প্রদান করেনি, আর কেউ কেউ করলেও দায়সারা গোছের। এভাবে দেশ বঞ্চিত হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। অথচ এসব ‘অলিগার’ ব্যক্তিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো গত দেড় যুগ সবচেয়ে বেশী অর্থ আয় করেছে।
এখন স্বৈরাচারী শাসক নেই, নেই তার শাসনামলের অসংগতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি। এনবিআর চেয়ারম্যান সম্প্রতি দেশের সকল স্তরের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, যারা এখনো ভ্যাট পরিশোধ করেননি, তারা যেনো দ্রুত ভ্যাট পরিশোধ ও নিবন্ধনের জন্য এগিয়ে আসেন। আমরা সুষ্ঠুভাবে ভ্যাট আদায়ে আহবানের পাশাপাশি আইনের কঠোর ও যথাযথ প্রয়োগের উপর জোর দিচ্ছি। কারণ দুর্নীতিবাজ শাসক গোষ্ঠীর অধীনে বেশীর ভাগ ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক ন্যায়নীতি ও নৈতিকতা বিলুপ্ত হয়েছে। সেটা পুনরুদ্ধারে কঠোর আইনের কঠিন প্রয়োগের কোন বিকল্প নেই।