বিস্ময়কর তথ্য বটে!
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩:৩৬ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ওষুধ সংক্রান্ত একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ‘গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সার্জেলের বার্ষিক বিক্রি ১ হাজার কোটি টাকা’ শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ হিসেবে পরিচিত সার্জেলের বিক্রি বছরে এক হাজার কোটির মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে। এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার। তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইএমএস হেলথের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে এই ওষুধ বিক্রি হয়েছে ৯শ কোটি টাকারও বেশী। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস্ট্রিক বাংলাদেশে একটি সাধারণ ও ব্যাপক বিস্তৃত স্বাস্থ্য সমস্যা। ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের অনেকগুলো সমস্যার সম্মিলিত রূপ হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক। এদেশের খুব সংখ্যক মানুষই আছেন যাদের এই সমস্যা নেই কিংবা জীবনের কোন না কোন সময় এই সমস্যায় আক্রান্ত হননি বা ভুগেননি। বিশে^র অনেক শীত প্রধান দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে এই রোগের প্রকোপ খুব কম। কিন্তু গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশ সমূহের দেশ বাংলাদেশে গ্যাস্ট্রিক নামক এই বিব্রতকর অশান্তি দায়ক অথচ প্রাণঘাতী নয়। এমন রোগের বিস্তার অস্বাভাবিক। কয়েক বছর আগে প্রকাশিত দেশে গ্যাস্ট্রিক প্রায় ঘরোয়া রোগ। ইতোপূর্বে গৃহিত এক চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক বছরে শুধু রাজধানী ঢাকায় একটি হাসপাতালেই গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসা নিয়েছেন অর্ধলক্ষ মানুষ।
বলা হয়, এতে বুঝা যায় রাজধানীর কয়েক লক্ষ লোক গ্যাসজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তখন এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, খাদ্যাভ্যাসের অনিয়মের কারণে প্রতি দশজনে অন্ততঃ পাঁচজন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন। এর পেছনে খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও নি¤œমানের খাবার গ্রহণকে অনেকে বিশেষভাবে দায়ী বলে মনে করেন। এছাড়া অপুষ্টি জীবনযাত্রার নি¤œমান এবং বিশৃংখল জীবনযাপন ও এজন্য অনেকাংশে দায়ী বলে তাদের ধারণা। গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, পেটে ব্যথা, বিশেষ করে খাবার গ্রহণের পরে বমি বমি ভাব ও বমি, পেট ফোলা, ক্ষুধা হ্রাস, ওজন হ্রাস, অস্বাভাবিক মল ইত্যাদি।
দেখা গেছে, অনেক গ্যাস্ট্রিক রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই হরদম ফার্মেসী থেকে নিজে থেকে কিংবা ফার্মেসীর লোকজনের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় দিনের পর দিন ওষুধ খাওয়া মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এতে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর গ্যাস্ট্রিক পলিপ, রক্তশূন্যতা, হাঁড় ক্ষয়, কিডনী রোগ ও ভুলে যাওয়া রোগ ডিমেনশিয়া, নিউমোনিয়া এবং পরিপাকতন্ত্রের ইনফেকশন হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যা ওষুধ গ্রহণ না গ্যাস্ট্রিক চিকিৎসায় কার্যকর। তাদের মতে, জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত ঝাল, তেল, মশলাযুক্ত ও চর্বি জাতীয় খাবার, দুধ ও দুধের তৈরী খাবার, দুধ ও দুধের তৈরী খাবার, শাকপাতা, রেডমিট পরিহার করতে হবে। ফাস্ট ফুড, চা, কফি, ধূমপান, অ্যালকোহল ও কোল্ড ড্রিংক থেকে দূরে থাকতে হবে। এর বিপরীতে ফাইবারযুক্ত খাদ্য ফলমূল ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, লাইফস্টাইল পরিবর্তন, মানসিক চাপ পরিহার, খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া, ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
উপরোক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সার্জেলের অতিরিক্ত ব্যবহার গ্যাস্ট্রিক রোগীর জন্য নানা পাশর্^ প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে। পাশর্^ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, তলপেটে ব্যথা ও কোষ্ঠ কাঠিন্য হতে পারে। তাই শুধুই অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের উপর নির্ভর না করে প্রাকৃতিক প্রতিকার পদ্ধতি বিশেষ করে ভেষজসহ বিকল্প ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। আমরা এদিকে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।