ছিন্ন করতে হবে চক্রান্তের চক্রজাল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৩৯ অপরাহ্ন
গতকাল মিডিয়ায় ‘ডিসেম্বরে রফতানি আয় বেড়েছে ১৭.৭২ শতাংশ’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সদ্য বিদায় নেয়া ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ রফতানি থেকে আয় করেছে ৪৬২ কোটি ৭৪ লাখ মার্কিন ডলার, যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশী।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রফতানি আয়ের পরিমাণ ছিলো ৩৯৩ কোটি ৯ লাখ ডলার। ডিসেম্বরে তৈরী পোশাক থেকে আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭৭ কোটি ৫ লাখ ডলারে। ২০২৩ সালে এই আয় ছিলো ৩২১ কোটি ৪ লাখ ডলার। ইপিবি’র তথ্যানুসারে, ডিসেম্বরে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে কৃষিপণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও হোম টেক্সটাইলের রফতানি বেড়েছে হোম টেক্সটাইলের রফতানি আয় ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলারে। আর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে রফতানি হয়েছে ১১ কোটি ৯ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এছাড়া কৃষিপণ্যের রফতানি আয় ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ১ লাখ ডলারে।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে তৈরী পোশাক, ওষুধ এবং চামড়াসহ ২৭ ধরনের পণ্য বিশ^বাজারে রফতানি হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশী।
বলা বাহুল্য, উপরের দেশের পণ্য রফতানি সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত ও পরিসংখ্যান আশাব্যঞ্জক। দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে দেশের রফতানিতে এমন অগ্রগতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে একটি মাইলফলক, এতে কোন সন্দেহ নেই। দেখা যাচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে রফতানি আয় ২ বা ৪ শতাংশ নয় ১৭/১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বলা আবশ্যক, বিগত হাসিনা সরকারের শাসনামলে রফতানি আয় বাড়িয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে, মিথ্যা পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে এক্ষেত্রে। শুধু তা-ই নয়, রফতানি থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগই নানা কৌশলে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। ফলে রফতানি থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশ ও জাতির প্রকৃত উন্নয়নে কোন কাজে আসেনি। বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। রফতানি আয়ের প্রকৃত তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। তাই রফতানি আয়ে অগ্রগতির চিত্র প্রতিভাত হচ্ছে। এদেশ থেকে রফতানিকৃত পণ্যের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইটেম। কিন্তু এই চামড়া নিয়ে বিগত দেড় দশকে যে অবহেলা, কারসাজি ও চক্রান্ত হয়েছে, তা থেকে অবিলম্বে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিবেশী দেশের স্বার্থে ও চক্রান্তে এদেশের চামড়া শিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। চামড়া শিল্পকে এ অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে পারলে এই শিল্প থেকে আরো বিপুল বৈদেশিক আয় করা সম্ভব। দেশের পোশাক শিল্প নিয়েও অনেক চক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে ওষুধ শিল্পেও নানা সমস্যা মাথাচাড়া দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন, কিন্তু ব্যাংকের ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না। অনেকে পালিয়ে গেছেন, অনেকে জেলে আটক। ফলে এগুলো এখন সংকটে পড়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষভাবে রফতানিমুখী ওষুধ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমরা এসব ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।