সীমান্তে উত্তেজনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৬:৪৫ অপরাহ্ন
গতকাল দৈনিক জালালাবাদে ‘সিলেট সীমান্তে বাড়ছে চোরাচালান ও হত্যাকান্ডের ঘটনা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়ারা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, যাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে কিছু বাংলাদেশী চোরাকারবারি। দুই পারের এই চোরাচালানী চক্রের লোভের শিকার হচ্ছেন সীমান্তবর্তী হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। সামান্য অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে চোরাই পণ্য আনা-নেয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। জানা গেছে, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো এখন চোরাচালানিদের হটস্পট হয়ে ওঠেছে। রাতের অন্ধকারে চোরাচালানিরা মাদক, চিনি, কাপড়, কসমেটিক্স ইত্যাদি পণ্য সামগ্রী আনা-নেয়া করছে। বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিতে কৌশল বদলেছে চোরাকারবারিরা। সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, চোরাচালান রোধে সীমান্তে বিজিবি’র টহল আরো জোরদার করতে হবে। পুলিশ বিজিবি’র অভিযান, গ্রেফতার, কড়াকড়িতেও চোরাচালান থামানো যাচ্ছে না। এসব অভিযানে চোরাই পণ্য জব্দ হলেও আড়ালে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা। যারা ধরা পড়ছে এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে তারা এসবের বাহক মাত্র। এছাড়া বিজিবি’র লোক দেখানো অভিযান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সূত্র মতে, চোরাচালানের পণ্যের মূল্য হুন্ডির মাধ্যমে চলে যাচ্ছে ভারতের ব্যবসায়ীদের হাতে। এতে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে সীমান্তে। গত ৬ জানুয়ারী সিলেট সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকায় এই হত্যার ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও সীমান্তের ওপারের ভারতীয় লোকজন তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। গত এক বছরে সিলেটের পর সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় খাসিয়াদের হাতে ৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। গত ২৭ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাটের সীমান্ত এলাকায় সবুজ মিয়া নামে এক যুবক নিহত হয়। ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সে মারা যায়। গত ২৬ ডিসেম্বর নিহত হওয়ায় মারুফ নামে এক কিশোর। এর আগে ১৪ জুলাই মারা যান কাউসার আহমদ। ভারত থেকে গরু আনতে গিয়ে খাসিয়াদের গুলিতে মারা যায় সে। একই দিনে মারা যায় আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে একে অন্যের প্রতি চড়াও হয় চোরাকারবারিরা। চোরাকারবারীদের টাকা নিয়ে ভারতীয় খাসিয়াদের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব হচ্ছে। আর এসবের বলি হচ্ছেন আনা-নেয়ার সঙ্গে জড়িত হতদরিদ্র লোকজন।
লক্ষণীয় যে, শুধু সিলেট সীমান্তে নয়, দেশের অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকায়ও ইদানিং চোরাচালান অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের সাথে রাজনৈতিক টানা পোড়েনের প্রেক্ষাপটে আমদানি-রফতানিতে সংকট সৃষ্টি হওয়ায় বৈধ পথে অনেক পণ্য এখন কম আসছে। ফলে বেড়েছে চোরাচালান।
চোরাচালানীদের মাঝে দ্বন্দ্ব সংঘাত ও বিরোধের ফলে সীমান্তে বাড়ছে উত্তেজনা। এতে হত্যাকান্ড বেড়েছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সীমান্তবর্তী এলাকার জনগণকে। হাসিনার শাসনামলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিলো। বিজিবি প্রায় নীরব দর্শক ছিলো। চোরাচালান দমনের নামে বিএসএফ এমনকি খাসিয়াসহ ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে হত্যাকান্ড, অপহরণ, গবাদিপশু ছিনতাই, ভূমি দখল, বেড়া নির্মাণসহ সব ধরনের অপকর্ম চলতো নির্বিবাদে। এখন বিজিবি সক্রিয় হওয়ায় বিএসএফ ও ভারতীয় দুর্বৃত্তদের সাথে মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে উত্তেজনা বাড়ছে সীমান্তে। গত সোমবার চাপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বেড়া নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রতিবেশী দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী শূন্যরেখা ঘেঁষে কাঁটাতারের বেড়া তৈরী করতে চাইলে বিজিবি এতে বাধা দেয়। বর্তমানে সিলেটসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের সাথে নানা কারণে উত্তেজনা বাড়ছে। বিএসএফ ও ভারতীয়দের বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বৈঠকের পাশাপাশি সীমান্তে প্রতিরক্ষা জোরদার করতে হবে। এমন দাবি সচেতন মহলের।