‘ষোল আনাই মিছে’
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৪৩ অপরাহ্ন
সম্প্রতি একটি জাতীয় মিডিয়ায় ‘অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বছর’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতার বেশ কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বছর। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মূলে অর্থনৈতিক কারণ ছিলো অন্যতম, ছিলো মূল্যস্ফীতির দহন ও বেকারত্বের যন্ত্রণা। সরকারের উচিত ছিলো এই দু’টিকে প্রাথমিকভাবে বাগে আনা। অর্ধডজন সংস্কার কমিটি বানানোর চেয়েও জরুরী ছিলো মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব নিয়ে দু’টি টাস্কফোর্স তৈরী করা।
মূল্যস্ফীতি একটি স্বল্পমেয়াদী সমস্যা, তবে এর অর্থ এই নয় যে, স্বল্প মেয়াদে এটি চলে যাবে। দ্রুত বা স্বল্প মেয়াদে এটাকে নামিয়ে না আনলে অন্য জটিলতা শুরু হবে। মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ হলে স্ট্যাগফ্ল্যাশন চেপে বসে, যার মানে অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও উচ্চ দামস্তরীয় অস্থিরতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান মূল্যস্ফীতির বড়ো কারণ চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট। সত্যি বলতে কি, চাঁদাবাজি এখন রূপ বদলেছে, বদলেছে পাত্র। আগে করতো সরকারী দলের নেতাকর্মীরা। এখন করছে দেশের একটি বড়ো বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা। আগে বড়ো ধরনের চাঁদাবাজির সাথে এমপি মন্ত্রীরাও জড়িত ছিলেন। পুলিশ জড়িত ছিলো এই অপকর্মে। কোন কোন ব্যবসায়ী নেতা চাঁদা তুলে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এনা বাস পরিবহনের এনায়েতুল্লাহ ও মন্ত্রী শাহজাহানও বড়ো মাপের চাঁদাবাজ ছিলেন। এখন তারা নেই। চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে। বখাটে নেতা পাতি নেতা ও কর্মীরা সবজি ব্যবসায়ী থেকে কন্ট্রাক্টর ও বড়ো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আর সিন্ডিকেট আগের মতো এতো শক্তিশালী না থাকলেও কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে তাদের দাপট ও আধিপত্য এখনো রয়ে গেছে। আমদানি বহুমুখীকরণের ফলে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের সিন্ডিকেটিং ভেঙ্গে পড়েছে। তবে চালের সিন্ডিকেট এখনো শক্তিশালী। ফলে এই ভরমৌসুমেও চালের দাম না কমে বরং বাড়ছে। এক্ষেত্রে আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ এবং মজুদদারী বিরোধী অভিযান অপরিহার্য। সর্বোপরি সরকারের শান্তিশৃংখলা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতেই হবে।
সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগটি এখন এক প্রকার ‘নিস্ক্রিয়তা’ মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে বলে উক্ত প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। প্রতিবেদনের উপরোক্ত বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। যদিও প্রতিবেদনে এতো মূল্যস্ফীতি ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতির এতো অবনতির পেছনে বিগত স্বৈরাচারী হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অপশাসনই সবচেয়ে দায়ী, তা উল্লেখ করা হয়নি। ফোকাস করা হয়েছে শুধু বর্তমান শাসনের উপর। সত্যি বলতে কি, হাসিনার সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে যায় দেড় দশকের কুশাসনের ফলে। ব্যাংক খাত বিধ্বস্ত করে ফেলে তার প্রশ্রয়ে তারই অলিগার তথা ঘনিষ্ঠরা। চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে তার আশ্রয় প্রশ্রয় ও সমর্থনে। এভাবে একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি রেখে পালাতে হয় এই স্বৈরশাসককে। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। তা সত্বেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের বড়ো ভুল হচ্ছে অগ্রাধিকার নির্ধারণে। সবকিছুর আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বেকারত্ব দুরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ ছিলো জরুরী। কিন্তু এটা রয়ে গেছে এখনো দ্বিতীয় স্তরে অর্থাৎ ওয়েটিং লিস্টে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে অসন্তোষ। আর্থিক কষ্টে পড়া মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই চ্যালেঞ্জ যদি অন্তর্বীকালীন সরকার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়, তবে অন্যান্য সকল সংস্কার ও কর্মসূচীই ‘ষোল আনা মিছে’র গল্পের পরিণতি বরণ করতে পারে, এমন অভিমত সচেতন মহলের।