শেখ হাসিনার মিথ্যার উত্তরাধিকারী!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৫:২৩ অপরাহ্ন
ব্রিটিশ এমপি ও মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে কেন্দ্র করে নানা ঘটনাবলী এখন বাংলাদেশ ও ব্রিটেনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে মিডিয়াগুলো তোলপাড়। শুধু ব্রিটেন ও বাংলাদেশ নয় গোটা বিশে^ ছড়িয়ে পড়েছে টিউলিপের নানা অপকর্ম ও অনিয়ম সংক্রান্ত খবর। এক কথায় বলা যায়, টিউলিপ এখন টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। টিউলিপের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে যে বিষয়টি সর্বাগ্রে নজরে আসে তা হচ্ছে, মিথ্যাচার। একজন ব্রিটিশ নাগরিক হলেও তিনি ব্রিটেনের অন্যতম মূল্যবোধ মিথ্যা না বলার বিষয়টি আত্মস্থ করতে পারেননি। বরং তিনি তার খালা বাংলাদেশের পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার জঘন্য মিথ্যাচারের উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতীয়মান। আর মিথ্যাচারই তাকে ব্রিটেনের মতো সভ্য রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপের অবস্থা সৃষ্টি করেছে। টিউলিপ প্রথমে বলেছেন, ব্রিটেনের সেন্ট্রাল এলাকায় তাকে যে ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করা হয়েছে, সেটা দিয়েছিলেন তার পিতামাতা। পরে দেখা গেলো, ফ্ল্যাটটি তিনি উপহার পেয়েছেন আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীর নিকট থেকে। কাগজেপত্রে এটা এখন প্রমাণিত এবং মিডিয়ায় তা প্রকাশিত হয়েছে। টিউলিপ আরেকটি বড়ো মিথ্যাচার করেছেন, তা হচ্ছে, তিনি বলেছেন, তার খালা হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। এখন দেখা যাচ্ছে, তিনি আগাগোড়া এই দলের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। অনেক ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারক ও প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এর ফলে তার ছোট বোনের ভায়া আরেকটি ফ্ল্যাট উপহার হিসেবে পেয়েছেন জনৈক বাংলাদেশী আইনজীবীর নিকট থেকে। এই আইনজীবী পতিত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর আইন উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি নাইকোসহ বিভিন্ন মামলায় রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিপুল অর্থ কামাই করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে টিউলিপ এই দু’টি ফ্ল্যাট থেকে আয়ের বিষয়টিও স্পষ্ট করেননি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এভাবে আগাগোড়া মিথ্যা দিয়ে এতোদিন নিজের অপরাধ ও অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এখন ব্রিটিশ মিডিয়ার অনুসন্ধানে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ায় নিজেকে সমর্পণ করেছেন সরকারী অনুসন্ধানী কর্তৃপক্ষের কাছে। অবশ্য এছাড়া আর কোন উপায়ও ছিলো না। ব্রিটিশ মিডিয়া যেভাবে তার বিরুদ্ধে একটার পর একটা নিউজ প্রকাশ করছে এবং তার অপকর্ম ও অনিয়ম তুলে ধরছে, এতে ব্রিটিশ সমাজে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টিউলিপসহ তার খালা ও মায়ের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। এই ঘটনাও প্রথমে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি মিডিয়া। এ নিয়েও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে টিউলিপকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সব মিলিয়ে টিউলিপকা-ে গোটা বিশ^ এখন তোলপাড়। বিশে^র সব ক’টি খ্যাতিমান পত্রপত্রিকা এসব ঘটনা নিয়ে প্রতিদিন সংবাদ প্রকাশ করছে। ফলে বিশে^র কোটি কোটি মানুষ এসব জানতে পারছেন। অপেক্ষা করছেন, ঘটনা কোন দিকে গড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত মিথ্যাবাদী অপরাধী টিউলিপের কী পরিণতি হয় সেদিকে।
পশ্চিমা সভ্য দেশগুলোতে দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধ নেই একথা বলা যাবে না। বাংলাদেশের মতো সব ধরনের অপরাধই ঐসব দেশে আছে। তবে পার্থক্য হচ্ছে ঐসব পশ্চিমা দেশে এগুলো অত্যন্ত কম ও নিয়ন্ত্রিত। তবে একটা বিষয় লক্ষণীয়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সাধারণ মিথ্যা বলেন না এবং চাকুরী বা দায়িত্বের রীতিনীতি ও শপথ ভঙ্গ করে কিছু করেন না। এ ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো অত্যন্ত কঠোর ও সংবেদনশীল। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন একজন নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করেন, কিন্তু তিনি তা অস্বীকার করে মিথ্যাচার করেন। এজন্য তাকে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। কঠিন অবস্থায় পড়তে হয় অনৈতিক সম্পর্কের জন্য নয়, বরং প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ ভঙ্গ করে মিথ্যা বলার জন্য। এ ঘটনা থেকেই বুঝা যায়, পশ্চিমা সমাজ মিথ্যা বলাকে কতোটা খারাপ ও বড়ো অপরাধ মনে করে। মিথ্যাচার নিয়ে পাশ্চাত্য জগতের এই অবস্থান অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ মিথ্যা বলাকে সকল অপরাধের মাতা বা উৎস বলা হয়। ইসলামসহ সকল ধর্মেই মিথ্যাকে বড়ো অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বলা হয়, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ঘুম থেকে উঠেই মিথ্যা বলা শুরু করতেন এবং তা চলতো রাতে ঘুমানোর পূর্ব পর্যন্ত। এই শেখ হাসিনার বোনঝি টিউলিপ তার সেই দোষের উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন তার কর্মকা-ের মাধ্যমে। হয়তো এজন্য তাকে বড়ো খেসারত দিতে হবে অচিরেই।