দুঃখ দিলেন রবিন খুদা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৪৭ অপরাহ্ন
সম্প্রতি মিডিয়ায় ‘অস্ট্রেলিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ে ৮শ’ কোটি টাকা অনুদান দিলেন বাংলাদেশি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ^বিদ্যালয়ে অন্যান্য নজির স্থাপন করেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক তরুণ উদ্যোক্তা। বিশ^বিদ্যালয়ে ৮শ’ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন তিনি। সংবাদ মাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অনুদান প্রদান এ বাংলাদেশীর নাম রবিন খুদা। তিনি অন্যতম শীর্ষ ধনী ও প্রযুুক্তি উদ্যোক্তা। বিশাল এ অনুদান দিয়েছে খুদা ফ্যামিলি ফাউ-েশন। এটি বিশ^বিদ্যালয়ের এককালীন পাওয়া সবচেয়ে বড়ো তহবিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যা বিশ^বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে অধ্যয়নরত পিছিয়ে পড়া নারীদের পেছনে ব্যয় করা হবে। যার মেয়াদ হবে ২০ বছর। সিডনি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য মার্ক স্কট জানান, রবিন এই শিক্ষা কর্মসূচী নিয়ে প্রায় দুই বছর ধরে নানা পরামর্শ করেছেন, এরপর এ বিষয়ে তহবিল গঠন করা হয়েছে। রবিন বলেন, সিডনি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসাধারণ। তারা চমৎকার গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন।
জানা গেছে, রবিন খুদা বাড়ি সিরাজগঞ্জে। ১৮ বছর বয়সে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। বর্তমানে তিনি পশ্চিম সিডনিতে বসবাস করছেন। ২০১৭ সালে এয়ারট্যাংক নামে একটি ডেটা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এর আগে কর্মীদের বিপুল পরিমাণ বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে হন। তার প্রতিষ্ঠান এয়ারট্যাংককে একটি মার্কিন কোম্পানী দুই লাখ ৮৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকায় অধিগ্রহণ করেছে।
উপরোক্ত ঘটনাটি যুগপৎ আনন্দ ও বেদনার। আনন্দের এজন্য যে বাংলাদেশের একটি বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত দরিদ্র এলাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী হয়ে রবিন খুদা এতো বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন। এটা গড়ে তুলেন প্রযুক্তি খাতের একটি খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান, মালিক হয়েছেন বিপুল বিত্ত বৈভবের। অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী না হলে হয়তো তার জীবনে এমন উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধন সম্ভব হতো না। যতোই মেধা থাক, সেই মেধাকে কাজে লাগানোর সুযোগ বা ক্ষেত্র না থাকলে তা পাথরের ওপরে পড়ে থাকা পাকা বীজের মতো নষ্ট হতে বাধ্য। রবিন খুদারও হয়তো এমন পরিণতি হতো দেশে থাকলে। মেধার যথাযথ বিকাশ হতো না তার। বাংলাদেশী প্রবাসী উদ্যোক্তা হিসেবে তার এই সাফল্যে তার এলাকাতো বটে গোটা বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত। আর বেদনার কারণটি হচ্ছে, এতো বন্যাদুর্গত নদী ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত এলাকায় জন্ম গ্রহণ করে বেড়ে ওঠা সত্বেও তিনি এতো বিপুল অর্থ বিত্তশালী দেশের ততোধিক বিত্তশালী বিশ^বিদ্যালয়ে অনুদান না দিয়ে বাংলাদেশে এ ধরণের মহতী ও কল্যাণধর্মী কাজে ব্যয় করতে পারতেন। এতে জন্মভূমির প্রতি তার ঋণ ও ভালোবাসার দাবি উভয়ই পূরণ হতো। একজন দেশপ্রেমিক প্রবাসী হিসেবে তিনি সারাজীবন আদৃত ও স্মরণীয় হয়ে থাকতেন। এই অর্থ কাজে লাগানো হলে বিশেষভাবে বেকারত্ব দূরীকরণে ব্যয় করা হলে কর্মসংস্থান হওয়া বাংলাদেশীরা জীবনভর তার জন্য দোয়া ও শুভ কামনা করতো।
অগণিত দরিদ্র পরিবার ভালোভাবে জীবন কাটানোর সুযোগ পেতো। কিন্তু দেশে শৈশব ও কৈশোর কাটানোর পর অস্ট্রেলিয়া গিয়ে তিনি সাফল্যের অধিকারী হলেও দেশকে তিনি তেমনভাবে মনে রাখেননি। মনে রাখলে ধনী দেশের ধনী প্রতিষ্ঠানে এতো বিপুল অর্থ দান করার আগে নিজের জন্মভূমির কথা অন্তত তিনি স্মরণ করতেন। আর এটাই তার জন্মস্থান। সিরাজগঞ্জসহ বাংলাদেশের মানুষের অনেকখানি দুঃখ বোধ ও মনস্তাপের কারণ। অস্ট্রেলিয়াসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী লাখ লাখ প্রবাসী যখন শ্রমে ঘামে অর্জিত অর্থ প্রতিনিয়ত দেশে পাঠাচ্ছেন নিজ পরিবার স্বজন ও দেশকে ভালোবেসে, তখন রবিন খুদার বিদেশে এতো বিপুল অর্থ অনুদান অনেককে বিস্মিত ও হতাশ করেছে। আমরা রবিন খুদার ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইনে কোন বাংলাদেশী প্রবাসী কিংবা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিদেশী নাগরিকের কাছ থেকে।
বলা বাহুল্য, রবিন খুদা সিডনি বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে অধ্যয়নরত পিছিয়ে পড়া নারীদের ব্যাপারে উদ্বেগ থেকে এই অনুদান প্রদান করেছেন। কিন্তু তিনি একবারও এদেশের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র পরিবারের কোটি নারীর কথা ভাবেননি। ভাবেননি এদেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলো বরাদ্দের অভাবে গবেষণাকর্ম চালিয়ে যেতে পারছেন না। ল্যাব বা বিজ্ঞানাগার না থাকায় এদেশের লাখো হাইস্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি এসব কারণেই বেদনার, দুঃখের। এমন দুঃখ যেনো আর কোনো প্রবাসী বা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিদেশীর নিকট থেকে পেতে না হয়, এ প্রত্যাশা ও প্রার্থনা আমাদের।