একটি দায়িত্বশীল প্রশংসনীয় উদ্যোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৪২ অপরাহ্ন
মিডিয়ায় ‘জুলাই শহীদ’র পরিবার পাবে ৩০ লাখ টাকা, ‘যোদ্ধারা’ পাবেন এককালীন টাকা ও মাসিক ভাতা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণাদায়ী এ সংবাদ। জুলাই বিপ্লবে আহত ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সরকারী অবহেলার যে অভিযোগ ছিলো অনেকের মনে, তা দূর হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানিয়েছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে প্রতি শহীদ পরিবার সঞ্চয়পত্রের নিরিখে এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন এবং আহতরা এককালীন টাকা পাবেন এবং প্রতি মাসে ভাতা পাবেন। ক্যাটাগরী ভিত্তিতে এককালীন টাকা ও ভাতার পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারী রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে তিনি একথা জানান। তিনি বলেন, যারা জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা পাবেন সঞ্চয়পত্রের নিরিখে। এর মধ্যে এই অর্থ বছরেই তাদেরকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আগামী অর্থ বছরের জুলাই মাস থেকে বাকী ২০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রের নিরিখে পাবেন। জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের তিনটি ক্যাটাগরী করা হচ্ছে। গুরুতর আহতরা ‘এ’ ক্যাটাগরীতে, তারা এককালীন ৫ লাখ টাকা পাবেন এবং ২০ হাজার টাকা প্রতি মাসে ভাতা পাবেন। এক অঙ্গহানি হয়েছে যাদের তারা ‘বি’ ক্যাটাগরীতে। তারা এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন, সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন।
পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন মাত্রায় তারা প্রশিক্ষণ পাবেন। তারা সরকারী, আধা সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরি পাবেন। আহত জুলাই যোদ্ধারা বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে আজীবন চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন ও মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। এখন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। এছাড়া আহতদের তালিকাও প্রস্তুত হয়েছে। খুব শিগগিরই তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। জুলাই যোদ্ধাদের পরিচয়পত্র দেয়া হবে।
সম্প্রতি উপদেষ্টা নাহিদ জুলাই যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা জানি আপনাদের আকাঙ্খা ছিলো আরো আগেই আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাজগুলো করতে পারবো। আমাদের আন্তরিকতার কমতি ছিলো না। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রত্যেকে আপনাদের ন্যায্য সম্মাননা দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। সংকটকালীন সময়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে, সে কারণে আপনাদের আকাঙ্খা অনুযায়ী আমরা দ্রুত কাজ করতে পারিনি। এ কারণে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
গত কয়েক মাসে আহত জুলাই যোদ্ধাদের একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাদের অভিযোগ ছিলো, তারা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনগণকে বিস্তর ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। যা-ই হোক, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেষ পর্যন্ত জুলাই যোদ্ধাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা ঘোষণা করেছেন। এটা অত্যন্ত এক প্রশংসনীয় ও দায়িত্বশীল কাজ। যে মানুষগুলো নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটাতে গিয়ে হতাহত হয়েছেন, তাদের সম্মান ও সহায়তা প্রদান জাতীয় দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসার জন্য আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সাফল্য কামনা করছি এ সংক্রান্ত সকল উদ্যোগের।