অনুশিখার বুকে কষ্টের শিখা!
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০:২০ অপরাহ্ন
সম্প্রতি ফেইসবুকের ‘জয় শ্রীকৃষ্ণ’ নামক আইডিতে একটি পোস্ট দেয়া হয়েছে, যা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া গ্রামের একটি ক্যান্সার আক্রান্ত কিশোরীর আর্তি ও আবেদন তুলে ধরা হয়েছে এই ফেইসবুক পোস্টে। অত্যন্ত হৃদয় বিদারক এই আবেদন। এতে বলা হয়েছে, ‘ভিক্ষুকের মতো নির্লজ্জভাবে পায়ে ধরে শুধুই শেয়ারটা ভিক্ষা চাচ্ছি। আপনার শেয়ারের মাধ্যমে হয়তো কোন কোন বিত্তবান, দানশীল ও দ্বীনদার ব্যক্তির নজরে আসবে বিষয়টি। হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদ ভুলে আপনারা এগিয়ে আসুন।’ অনুশিখার ক্যান্সার হয়েছে। তার করুণ আকুতি, মা যেভাবে হোক আমাকে বাঁচাও, আমি বাঁচতে চাই। তাঁর চিকিৎসার জন্য ৮/৯ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তাঁর দিনমজুর পিতার পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। মিডিয়ার এই বক্তব্যের সাথে অনুশিখার মায়ের একটি অশ্রুসজল চোখে করজোড়ে আবেদনের ছবিও ছাপা হয়েছে। অত্যন্ত মানবিক এক আবেদন। ক্যান্সারের মতো কঠিন অসুখ হলে একটি দরিদ্র পরিবারের একজন রোগী ও তার পিতামাতা স্বজনের অবস্থা কেমন হয়, কতোটা অসহায় ও হতাশ বোধ করেন তারা, তা সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন। এদেশের বিত্তবান মানুষের উচিত মেয়েটির চিকিৎসার সহায়তায় এগিয়ে আসা। সবচেয়ে ভালো হয় সরকারের পক্ষ থেকে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একজন অসহায় মাকে কেন ভিক্ষুকের মতো পায়ে হাতে ধরে মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইতে হচ্ছে। এটা যে কোন মানবতাবোধসম্পন্ন বিবেকবান মানুষকে আহত ক্ষুব্ধ করার কথা। দেশে যদি দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে কিংবা স্বল্প ব্যয়ে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের ব্যয়বহুল চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতো, তবে রোগী কিংবা তার পিতামাতাকে এতটা বিপন্ন ও অসহায়বোধ করতে হতো না। চিকিৎসার সাহায্যের জন্য কারো হাতে পায়ে ধরার প্রয়োজন হতো না। বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
প্রায় অর্ধদশক আগে মিডিয়ায় দেশের ৮টি বিভাগে ৮টি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হয়। বলা হয়, ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘসময় অতিক্রান্ত হলেও এগুলোর কোন খবর নেই। এখনো ক্যান্সার রোগী ও তাদের স্বজনদের ঢাকাভিত্তিক কয়েকটি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য।
ডাঃ রিফাত আল মাজিদ নামক জনৈক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও র্যামফিট মেডিকেল কনসালটেশন সেন্টারের ক্লিনিক্যাল কো-অর্ডিনেটরের একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে কিছুকাল আগে। এতে তিনি অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন এ বিষয়ে। তিনি বলেছেন, বিশে^র সকল দেশে অনেকগুলো জটিল টেস্টের পরই ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করা হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পেতে হলে একজন রোগীকে অবশ্যই একটি প্রোসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, এই ধাপগুলো আমাদের দেশের দরিদ্র মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য কতোটা সহজলভ্য। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের জন্য সেসব নিয়ে আমাদের নীতি নির্ধারকদের এখনই ভাবতে হবে এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, গত দেড় দশকে বাংলাদেশে লক্ষ কোটি টাকার বহু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু এদেশের দরিদ্র ক্যান্সার রোগীদের কথা ভেবে একটি প্রকল্পও গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমান সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে। দূর করতে হবে অনুশিখার মতো ক্যান্সার রোগী ও তার স্বজনদের হতাশা ও অসহায়ত্ব।