নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রাভঙ্গ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুন ২০২৩, ১২:৩০:০১ অপরাহ্ন
বছরের পর বছর ধরে শত শত কোটি টাকা লোকসান দেয়া এবং আসন খালি নিয়ে বিমান পরিচালনা সত্বেও নতুন ১০টি বিমান কিনতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তা-ও আবার যাত্রীবাহী নয়, কার্গো অর্থাৎ মালবাহী বিমান। বিমান কেনা হচ্ছে মার্কিন বোয়িং কোম্পানী নয়, ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানী থেকে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ফ্রান্স থেকে ১০টি বিমান কিনছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের বিমান বহরে বোয়িংয়ের আধিপত্য হ্রাস করে প্যারিস অত্যাধুনিক ও স্বল্প খরচের বিমান নির্মাণ কোম্পানী এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
সচেতন মানুষের মতে, কমিশনের লোভে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শিক্ষা দিতে বাংলাদেশ মার্কিন কোম্পানী বোয়িং থেকে বিমান না কিনে এয়ারবাস থেকে এয়ারক্রাফট অর্থাৎ বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। কারণ বোয়িংয়ে কোন কমিশন বাণিজ্যের সুযোগ নেই, যা এয়ারবাসে আছে। বিমান ক্রয়ের ক্ষেত্রে এদিক দিয়ে সংশ্লিষ্টরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাবেন। আর এভাবে নতুন ভিসা নীতি এবং অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা ও কঠোরতা আরোপ নিয়ে দৃঢ় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানীকে একটি বড় অংকের অর্থ আয় থেকে বঞ্চিত করে কিছুটা হলেও প্রতিশোধ নেয়া যাবে। এমন হিসাব নিকাশ থেকেই ক্ষমতাসীন মহল তথা সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বলা বাহুল্য, বর্তমানে বাংলাদেশে ড্রিম লাইনারসহ যেসব বিমান রয়েছে, সেগুলোই যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না বা যাচ্ছে না। এমনকি বছরের পর বছর অগণিত শূন্য আসন নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে বিমানের ফ্লাইটগুলো। ফলে বিমানকে প্রতি বছর গুনতে হচ্ছে বড় অংকের লোকসান। বিশেষভাবে কার্গো বা মালবাহী বিমানের তেমন কোন চাহিদা বা উপযোগিতা নেই বাংলাদেশে। শুধুমাত্র তৈরী পোশাক ও সবজি রফতানির কাজে ব্যবহৃত হয় বিমানের যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপগামী কার্গো ফ্লাইটগুলো। আসার সময় খালি বিমান নিয়ে আসতে হয় কোন আমদানি পণ্য না থাকার ফলে। কারণ বাংলাদেশী পণ্য ইউরোপ আমেরিকায় রফতানি হলেও আমদানি পণ্য আসে মূলতঃ চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে।
এছাড়া বাংলাদেশের বিমান বহরে দীর্ঘকাল যাবৎ বোয়িং বিমানই রাজত্ব করছে। ফলে এগুলোর পরিচালনায় একটি ভালো নেটওয়ার্ক ও টিম গড়ে ওঠেছে। কিন্তু হঠাৎ করে এয়ারবাসের বিমান আনা হলে এগুলোর পরিচালনায় ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। পাইলট, প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানসহ কর্মীদের নতুনভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়তে হবে। এছাড়া এতে বার্ষিক ব্যয় প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি অতিরিক্ত ব্যয় হবে এমন তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলো। যুক্তরাষ্ট্রকে উচিত শিক্ষা দিতে গিয়ে দেশের রাজস্ব ভান্ডার থেকে এতো বিপুল অর্থ গচ্ছা দিতে হবে প্রতি বছর। এ যেনো ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গের মতো’, নির্বোধ ও প্রতিহিংসামূলক কর্মকান্ড। দেশের হিতকামী ও সচেতনমহল দেশের বর্তমান সংকটপূর্ণ ও বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থায় এ ধরনের আত্মঘাতী তৎপরতা থেকে বিরত থাকতে ক্ষমতাসীন নেতানেত্রীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বিমানের জনৈক উর্ধতন কর্মকর্তা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে বা তাদের পরামর্শ ছাড়া এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানিয়েছেন সরকারের প্রতি।